বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া সমন্বয় করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
রোববার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা-৩৪-এর ২-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করলো। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে একজন যাত্রীর জন্য প্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সার স্থলে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া যথাক্রমে ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা ও ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা করা হয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) ভেতরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস উভয়ক্ষেত্রে একজন যাত্রীর জন্য প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বিআরটিএ থেকে অনুমোদিত আসন সংখ্যা কমিয়ে আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য বাস/মিনিবাসের আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাস করা হলে আনুপাতিকভাবে ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে বলে জানানো হয়। সেক্ষেত্রে রুট পারমিট অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ/যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি) থেকে আনুপাতিকভাবে ভাড়ার হার অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।
এই ভাড়া বৃদ্ধি গ্যাস, অকটেন ও পেট্রলচালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত এর আগের জারি করা সব প্রজ্ঞাপন বা আদেশ বাতিল করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এই ভাড়ার হার ৮ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে, দুপুরে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে গণপরিবহনে ভাড়া পুনর্নির্ধারণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের বৈঠকে প্রস্তাবের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকের পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ‘অনানুষ্ঠানিক’ ধর্মঘট তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সারাদেশের বাস মালিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। আমরা তাদের সেন্টিমেন্টের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিলাম। পাশাপাশি জনদুর্ভোগ লাঘবে সবার সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারই আলোকে আজ দুপুরে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়। যেহেতু ভাড়া পুনর্নির্ধারণ হয়েছে, আগামীকালই গেজেট হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা সব মালিকদের বাস চালু করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এখন থেকে নতুনভাবে নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হবে। তবে যাত্রীদের থেকে সরকারনির্ধারিত ভাড়ার বেশি কোনোভাবেই নেওয়া যাবে না।’
এর আগে, জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানোর প্রতিবাদে সারাদেশে তিনদিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট চলে। পরিবহন মালিকরা শুরু থেকেই ভাড়া সমন্বয় বা ডিজেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরই মধ্যে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর কারণে গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বিআরটিএকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। গত ৩ নভেম্বর রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়।
ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পরদিনই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর ৫ নভেম্বর (শুক্রবার) ভোর ৬টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে বাস-ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকরা। এতে সারাদেশে ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষ।