অপেক্ষার প্রহর কদাচিৎ মধুর-তিক্ত দুটোই হয়। তবে বইমেলার ক্ষেত্রে অপেক্ষাটা মধুরই হয়। মাসব্যাপী এই গ্রন্থমেলার মধুর স্বাদ পেতে সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন বইপ্রেমীরা। কেননা এই মেলা লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলা।
আর মাত্র কয়েকদিন পরই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ তো বটেই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও বইপ্রেমীদের পদচারণে মুখরিত থাকবে। যারা নিয়মিত বই পড়েন না, তারাও অন্তত একবারের জন্য হলেও আসবেন নতুন কোনো বই এসেছে কি না সেই খোঁজ নিতে।
বাংলা একাডেমি আয়োজিত এই মেলা শুধু বইয়ের প্রচার কিংবা বিক্রি নয়, এটি আজ পরিণত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসবে।
বইমেলাকে ঘিরে এবার প্রকাশকরাও বেশ ব্যস্ত। অন্তত গতবারের তুলনায় এবার বেশি বই প্রকাশের কথা জানিয়েছেন বেশ কিছু প্রকাশক। তবে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মতো এবারও বইমেলায় অংশগ্রহণেচ্ছু প্রকাশকরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
একাধিক প্রকাশক জানিয়েছেন, সংক্রমণ আরও বাড়লে মেলা হবে কি না, হলেও জমবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। সংক্রমণ বাড়া অব্যাহত থাকলে ভয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বইমেলায় অনেকেই আসবেন না। বিশেষ করে এরই মধ্যে মেলা দু’সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ায় তা আরও বেশি করে ভাবাচ্ছে প্রকাশকদের। তবে আশাও ছাড়তে চাইছেন না তারা।
অন্বেষা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, কোভিডের কারণে গতবার যেহেতু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম, সে কারণে এবারের মেলা নিয়ে আমাদের একটু বেশি প্রত্যাশা ছিল। তবে এবারও করোনার থাবা আমাদের প্রত্যাশাকে হতাশার ছায়ায় ঢেকে দিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা গেলে এবারের মেলায় করোনা কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই আমি মনে করি।
এবার বেশি বই প্রকাশের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে প্রায় সবাই এবার বেশি বই প্রকাশের প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমার প্রকাশনা সংস্থা থেকে এবার ৫০টির মত নতুন বই প্রকাশ হবে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১২ খণ্ডে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ’ এর সংকলনগ্রন্থ।
অন্যপ্রকাশের নির্বাহী পরিচালক মাযহারুল ইসলাম বলেন, মেলার দর্শনার্থী, পাঠক, ক্রেতা ও বিক্রেতা সবাইকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা উচিত। এবারের মেলায় আমাদের প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ নতুন শতাধিক বই প্রকাশ করছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার সম্পাদিত ‘কিংবদন্তী’ বইটি আমাদের বিশেষ বইয়ের তালিকায় রয়েছে। মৃত্যুর আগেই স্যার বইটি সম্পাদনা করে গেছেন।
আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি বলেন, গতবছর প্রকাশকরা বইমেলা থেকে তাদের খরচও ওঠাতে পারেননি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিও জটিল। এমন অবস্থায় মেলা করে খুব একটা লাভ হবে তা ভাবার নেই। মেলা নিয়ে প্রকাশকদের ভাবা উচিত। এই অবস্থায় মেলা না করাই ভালো এবং গতবারের মতো টাকা না ওঠার বিষয় আছে। পরপর দু’বছর প্রকাশকদের এভাবে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া উচিত না। বিশেষ করে মেলা শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন নির্দেশনা যেমন- আজ চারটা পর্যন্ত, আজ তিনটা পর্যন্ত নিয়ম বেঁধে দেওয়া সুখকর নয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতে কলকাতা বই মেলাও একবার বন্ধ ছিল। তাতে খুব বড় ক্ষতি হয়নি- এ বিষয়গুলো আমাদের ভাবা উচিত।
তিনি বলেন, এটা ঠিক যে বইমেলাকে কেন্দ্র করে অনেক নতুন বই আসে, প্রকাশ হয়। তবে যারা প্রকৃত প্রকাশক তারা সারাবছরই বই প্রকাশ করেন। আমার প্রকাশনী থেকেও প্রায় ৪০টি নতুন বই প্রকাশ হয়েছে।
এদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের মতো এবারও বিশাল আয়তনজুড়ে মেলার অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম এবং দক্ষিণ দিকে শ্রমিকরা মাটিতে বাঁশের খুঁটি গেড়ে ছোট ও বড় স্টলের ফ্রেম তৈরি করছেন। গোটা উদ্যান জুড়ে বৃহৎ কর্মযজ্ঞ।
এর আগে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অমর একুশে বইমেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তা দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ পর কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিতব্য বইমেলাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে করোনার টিকা সনদ ও কোভিড টেস্টের সনদ প্রদর্শন করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।