নগরীর হকার সমস্যার সমাধানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানের সহযোগিতা কামনা করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, আমাদের জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশে হকাররা বসতেছে। আমি জনপ্রতিনিধিকে অনুরোধ করবো, ভাই বহুত হইছে। এখন সবকিছু বাদ দিয়া আসেন শহর ঠিক করি। শহরের মানুষের কল্যাণে কাজ করি। এই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান সাহেব। আপনাকে আমি অনুরোধ করবো, বড়ভাই আপনি আইছেন কয়েকবার, কিন্তু এই হকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আপনাকে দিতে হবে। যেতেতু আপনার ছোটভাই হকার বসিয়ে রেখেছে। এই সমস্যাটা সমাধান আপনাকে করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় ১৫ নং ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গণসচেতনতামূলক র্যালির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কোঠা বলেন।
তিনি বলেন, আপনাকে (সেলিম ওসমান) অনুরোধ করবো, সকালবেলা দুই নম্বর গেট থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত আসেন, দেখবেন সব পরিষ্কার, সব সুন্দর। কিন্তু দুই নম্বর গেট থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত যত নোংরা, অপরিষ্কার, পলিথিনে ভরা, কালিয়ানি খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে বিসিকের জন্য, সারা শহর ট্রাকে ভর্তি, বাসের নগরী যেন। এইগুলো নিয়ে আপনি যদি কিছু না বলেন তাহলে আমি রাস্তায় নামলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হবে। আমি সেই সংঘর্ষ এড়াতে আহ্বান জানাচ্ছি, শান্তিপূর্ণভাবে প্রশাসনকে নিয়ে, এই শহরের মানুষকে নিয়ে কীভাবে এই শহরকে পরিষ্কার রাখবো সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এতে আপনাদেরই সুনাম হবে।
আইভী বলেন, প্ল্যাস্টিক দিয়ে সারা নারায়ণগঞ্জ সয়লাব, ফুটপাত দখলে থাকে। হাজার বলেও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পারিনি। কেন পারিনি তা জানেন। আজকে হয়তো এইখানে দাঁড়িয়ে কথাই বলতে পারতাম না, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি এই ফুটপাত মুক্ত করতে গিয়ে হয়তো মারাই যেতাম। আল্লাহ বাঁচাইয়া রাখসে আপনাদের জন্য। এই হকার উচ্ছেদের জন্য কী না হলো। তোমরা সব দলের মিছিল-মিটিংয়ে যাও, সব নেতাই তোমাদের দরকার পড়ে। রাস্তার মধ্যে বইসা টাকা দেও প্রশাসনকে আর মাসলম্যানদেরকে। কিন্তু ফুটপাতে আমার জনগণ কেন হাঁটতে পারবে না, প্রশাসনই বা নিশ্চুপ থাকবে কেন? যাদেরকে ভোট দিয়ে আমরা পাস করাই, সংসদে গিয়ে বড় বড়, লম্বা-চওড়া কথা বলে তাদের নির্দেশে কেন এই শহর দখল করে নোংরা করবে? তাদের বিচার নাই কেন? কারণ সমাজের মানুষ চুপ হয়ে গেছে। মধ্যবিত্ত সমাজ যখন চুপ থাকে তখন সমাজে অপকর্ম বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, নিজের শহরের প্রতি যার মায়া নাই তার ঈমান মজবুত হইতে পারে না। যে সমাজের জন্য কাজ করে না, সত্যকে সত্য বলে না, মিথ্যা ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না, তাঁর নামাজ-রোজা আর আরতি কোন কাজে আসবে না। মানুষের জন্য কাজ করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো আর সত্যকে সত্য বলা, মাতৃভূমিকে ভালোবাসা, নিজের এলাকা সুন্দর রাখা আপনার প্রথম ডিউটি। এই ডিউটি ক’জন পালন করেন আমি জানি না।
মেয়র আইভী, এই ২০ বছরে নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানে, আমি কী এবং কেমন, আমি চাইলে জনগণকে নিয়ে কী করতে পারি। আপাতত আমি থেমে থাকবো, আপনাদের অপেক্ষায় থাকবো। আপনাদের নিয়েই শহরবাসীর উন্নয়নে কাজ করতে চাই।
তিনি বলেন, সিটিতে পাঁচটা বাণিজ্যিক ভবন করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আমি জনগণের স্বস্তির জন্য বাবুরাইল খাল উদ্ধার ও জিমখানা লেক নির্মাণে কাজ করেছি। যেখানে একসময় ঝুলন্ত টয়লেট ছিল সেখানেই এখন পরিষ্কার পানি, মানুষ ঘুরতে আসে, স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। কিন্তু এইটা করতে গিয়ে আমি অনেক প্রভাবশালীর বাধার সম্মুখীন হয়েছি কিন্তু তখন নগরবাসী আমার পাশে ছিল বলে কাজগুলো করতে পেরেছি। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ খাল ও ত্রিবেণী খালসহ অনেক খাল, জলাশয় আমি উদ্ধার করেছি। আমি চাই ছোট হলেও জলাশয় থাকুক। প্রকৃতিকে আপনি বাধাগ্রস্ত করলে, আঘাত করলে তা কিন্তু আবার ফেরত আসে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস।