শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ফতুল্লা পুলিশের তড়িৎ তৎপরতায় বাঁচলো তিনটি প্রাণ

  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ মার্চ, ২০২২, ৩.০৭ এএম
  • ১৫১ বার পড়া হয়েছে

স্ত্রীকে ফিরে না পেয়ে দুই সন্তান নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় এক যুবক। এজন্য নারায়ণগঞ্জ শহরের কালিরবাজার থেকে তিনজের জন্য কাফনের কাপড়ও কেনা হয়। পরিকল্পনা ছিল সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় ভাড়া বাসায় গিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে ওই যুবক। তবে এর আগে সে নিজ ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে স্ত্রী ও শ্বশুড় বাড়ীর লোকজনকে উদ্দেশ্য করে নিজের আত্মহত্যার কথা জানিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিজ গন্তব্যের পথে। কিন্ত লাইভে এমন দৃশ্য দেখে কেউ একজন বিষয়টি জরুরী সেবা ৯৯৯-এ জানায়। পরে ৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সুকান্ত দত্ত লাইভে আসা যুবকটির ফেইসবুক আইডি থেকে তার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে। এবং জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল)নাজমুল হাসান ও ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রকিবুজ্জামানের পরামর্শে যুবকটির সাথে কথা বলেন। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট যুবকটির সাথে কাউন্সিলিং করে তাকে আত্মহত্যার পথ থেকে সরে আসার অনুরোধ করে কৌশলে তাকে থানা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসা হয়। একই সাথে যুবকটির শ্বশুড়, শ্বাশুড়িসহ স্ত্রী কে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে প্রায় চার ঘন্টা ব্যাপক কাউন্সিলিং শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান, ফতুল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ রকিবুজ্জামান, পরিদর্শক মোজাম্মেল হক ও ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক সুকান্ত দত্ত সমাঝোতা করে স্বামী-স্ত্রীকে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির নিকট তুলে দেন।

 

ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সুকান্ত দত্ত জানায়, শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকেল সোয়া পাচঁটার দিকে জরুরী সেবা ৯৯৯-এ সংবাদ আসে যে এক যুবক দুই সন্তানসহ আত্মহত্যা করবে এই মর্মে লাইভে এসে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। পরে সংগ্রহ করা হয় লাইভে আসা ফেইসবুক আইডির লিংকটি। সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয় লাইভে আসা যুবকের মোবাইল ফোন নাম্বার। সেই নাম্বারে যুবকের সাথে প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট কাউন্সিলিং করে তার সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রæতি দিয়ে তাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার প্রস্তাব দিলে তার কথায় রাজী হয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে চলে আসে ফতুল্লা থানায়। অপরদিকে স্ত্রীসহ যুবকের শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে নিয়ে আসা হয় ফতুল্লা থানায়। সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা আলোচনা শেষে রাত এগারোটার দিকে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি, স্ত্রীর সাথে যুবকের সমাঝোতা করে দেওয়া হয়।

লাইভে আসা যুবক জানায়, দশ বছর পূর্বে তাদের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে চার বছর বয়সী একটি ছেলে ও নয় বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের জের ধরে তার স্ত্রী বাপের বাড়ীতে চলে যায়। গত কয়েকদিন পূর্বে সে জানতে পারে তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। সেটা জানতে পেরে সে তার শ্বশুড়ের দ্বারস্থ হলে শ্বশুড় তাকে চড়-থাপ্পড় মেরে তাড়িয়ে দেয়। এতে করে সে সদর মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরীও করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রীকে ফিরে পাবার কোন সুরাহা না পেয়ে সে দুই সন্তানসহ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরিকল্পনানুযায়ী মৌচাকে একটি রুম ভাড়া নেওয়া হয়। সেখানেই এক সাথে ছেলে মেয়েকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা ছিলো। এজন্য শহরের কালিরবাজার থেকে কেনা হয়েছিলো তিনজনের জন্যই কাফনের কাপড়।

 

ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রকিবুজ্জামান জানান, তার কর্ম জীবনের সবচাইতে রিস্কি দিন ছিলো এটা। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রিস্ক নিয়ে মেধার সবটুকু দিয়ে তিনজনকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সামর্থ্য হয়েছি। কর্মজীবনে এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা বলে তিনি মনে করেন।

প্রসঙ্গত: সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ওই যুবক, তার দুই সন্তান, স্ত্রী ও শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort