রুদ্রবার্তা২৪.নেট: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার পর মরদেহ ২১ টুকরো করে ডোবায় ফেলে দেয়ার ১০ মাস পর ঘাতক স্বামী রাসেলকে গ্রেফতার করেছে পিআইবি পুলিশ। তার দেয়া তথ্যে হত্যায় ব্যবহৃত বটি, ফ্রিজ, ১৯ টি হাড় ও দেহের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ’র পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘটনার আদ্যপ্রান্ত জানান।
নিহত নারীর নাম তানজিনা আক্তার তানিয়া (২৫)। সে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার আব্দুল জলিলের মেয়ে। হত্যাকারী মোঃ রাসেল (২৯) একই জেলা ও থানার কুমুরগঞ্জ গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ জানায়, রাসেল স্বীকারোক্তিতে বলেন, রাসেলের প্রথম স্ত্রী মেনালিসা ঢাকার সাভারে বসবাস করে। সে তানজিনাকে নিয়ে ফতুল্লা থানার আদর্শ নগর রঙ্গিলা রোডে নোয়াবের বাড়ীর ৩য় তলায় ভাড়ায় বসবাস শুরু করে আসছিল। বিয়ের পর থেকেই তানজিনা রাসেলের মৃত বোনের স্বামী মোস্তফাসহ বিভিন্ন পর পুরুষের সাথে গোপনে কথা বলে এমন অভিযোগে সন্দেহ করতো রাসেল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। ঘটনার দিন গত ২৯ মার্চ শবেরাতের রাত ৩ টায় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায় রাসেল।
রাসেল জানায়, সে শবে বরাতের নামাজ শেষে বাড়ী ফিরে তানজিনাকে মোবাইলে কথা বলতে দেখে রাগান্বিত হয়ে মারপিট শুরু করে। এক পর্যায়ে রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে থাকা রান্নার কাজে ব্যবহার করা বটি দিয়ে তানজিনার গলায় আঘাত করে। এতে তার গলা কেটে রক্ত বের হয় এবং সঙ্গা হারিয়ে ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। পরে রাসেল বটি দিয়ে তানজিনার ধর থেকে মাথা কেটে আলাদা করে ফেলে। এবং হাত পাঁসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে রেখে দেয়।
ঘটনার পরে বিভিন্ন সময়ে খন্ডিত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ তার বাসার ছাদ থেকে পার্শ্ববর্তী ময়লার স্তুপের মধ্যে ফেলে দেয়। সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল ২০২১ গভীর রাতে খন্ডিত মাথা একটি প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে ভর্তি করে ওই এলাকার বাড়ৈভোগ বটতলা এলাকায় একটি ডোবার মধ্যে ফেলে দেয়। এই ঘটনার পরে রাসেল তার ভাড়া বাসা ছেড়ে হাড়ি পাতিল ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত বটি নিয়ে গোপনে পালিয়ে যায় এবং সোনারগাঁ থানার ছোট সাদিপুর এলাকায় ফিরোজ হোসেনের একটি টিন সেড ঘর ভাড়া নেয়। পরবর্তীতে তানজিনার আত্মীয় স্বজন তার খোঁজ খবর না পেয়ে তানজিনার ভাগ্নে পলাশ ফতুল্লা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে। এই জিডির সূত্র ধরে থানা থেকে রাসেলকে ফোন দিলে সে সোনারগাঁ থেকে পালিয়ে যায় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তীতে উক্ত রাসেল বিভিন্ন সময়ে নামে বেনামে ২৫টি মোবাইল এবং ১৫টি সিম ব্যবহার করে এবং তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে।
এক পর্যায়ে রাসেলকে গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ভাড়া বাসা থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত বটি ও মৃতদেহ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়। নিহত তানজিনার ব্যবহৃত মোবাইলটি রাসেলের বোন আশার হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘাতক রাসেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তানজিনার দেহের অন্যান্য খন্ডিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং তার অংশ বিশেষ আজ ভাড়া বাড়ির পাশে ময়লার স্তুপ ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, হত্যার পর মরদেহ ২১ টুকরো করা হয়। যা স্বিকার করেছে রাসেল।
তাছাড়া এ হত্যাকান্ডে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এবং হত্যাকান্ডের মূল রহস্য বের করে আসামীকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।