রুদ্রবার্তা২৪.নেট: এক বছর পূর্বে সুদের টাকা পরিশোধে বিক্রি করা সেই শিশুকে উদ্ধার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাতে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দক্ষিণপাশা এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
এ সময় আটক করা হয় শিশুটিকে কিনে নেয়া রানু বেগম (৪০) নামে এক নারীকে। রানু দক্ষিন পাশা এলাকার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত নেমে নিজস্ব সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দক্ষিণ পাশা গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাচ্চাটিকে উদ্ধার সহ আটক করা হয়েছে রানু বেগমকে। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত লাকি বেগমকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান।
এদিকে আটক রানু বেগম জানান, তার এক মেয়ে ও প্রতিবন্ধী এক ছেলে আছে। তিনি একটি ছেলে শিশু দত্তক নেবেন বলে আগেই প্রতিবেশীদের জানিয়ে রেখেছিলেন। বছরখানেক পূর্বে সুমা নামে আত্মীয় রানুকে নবজাতক এক শিশুকে তার মা বিক্রি করবে বলে জানায়। পরে তিনি ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে রানীর শিশুটিকে ‘দত্তক’ হিসেবে নিয়েছিলেন। তার নাম রেখেছেন ইউসুফ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রানু বলেন, নিজের সন্তানের মতোই তাকে গত একবছর লালন করেছেন রানু।
সুমা জানান, তার বোন ঝর্নার মাধ্যমে বাচ্চা বিক্রয়ের বিষয়টি জানতে পারেন। বিষয়টি তিনি তার মামি রানুকে জানালে সে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি কিনে নেয়।
অপরদিকে ঝর্না জানায়, আলীগঞ্জ এলাকার পিডবিøউডি কলোনির শাহালমের ভাড়াটিয়া ফারুকের স্ত্রী রুবিনা তাকে ফোন করে জানায় বাচ্চা বিক্রির কথা। রুবিনা জানায়, লাকি বেগম তাকে বাচ্চা বিক্রির কথা জানায়। পরে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাচ্চাটি কিনে নেয় রানু বেগম। লাকি টাকা নেয় এবং বাচ্চাটিকে তার মা নিজেই রানু বেগমের হাতে তুলে দেয়।
শিশুটির মা রানী বেগম পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার বাদুরতলী এলাকার হান্নান চৌকিদারের স্ত্রী। বর্তমানে তিনি ফতুল্লার আলীগঞ্জ পিডবিøউডি কলোনীতে বাস করেন। স্বামী হান্নান চৌকিদার রাজমিস্ত্রির কাজ করেন এবং দিনমজুরের কাজ করেন রানী। থানায় দেওয়া অভিযোগে তিনি বলেন, বছর দুই পূর্বে তিনি প্রতিবেশী লাকি বেগমের কাছ থেকে চড়া সুদে ৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। গত ২ বছরে ৫ হাজার টাকার বিপরীতে লাকি বেগমকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এতেও সুদের টাকা পরিশোধ না হওয়ায় লাকি বেগমের প্ররোচনায় একদিনের নবজাতক শিশুকে বিক্রি করে দেন আরেক নারীর কাছে। তবে সন্তান বিক্রির টাকাও তিনি পাননি বলে অভিযোগ রানীর। এমনকি সুদ ও আসল মিলিয়ে এখনও ১ লাখ ৩ হাজার বাকি আছে দাবি করে গত ১৪ এপ্রিল মারধরের হুমকি দিয়েছে লাকি বেগম।
রানীর অভিযোগ, এক বছর পূর্বে ভোর পাঁচটার দিকে তার ছেলে সন্তান প্রসব হয়। ওইদিন বিকেলে লাকি বেগমের প্ররোচনায় এবং সুদের টাকার পরিশোধের জন্য ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সন্তানকে বিক্রি দেন। তবে সন্তান বিক্রির টাকার পরিবর্তে লাকি তাকে একটি পুরাতন খাট ও টিভি দিয়েছিল এবং সুদের টাকা কেটে নিয়েছিল। তাকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে লাকি বেগমের দাবি, অভাবের তাড়নায় রানী বেগম স্বেচ্ছায় তার নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করেছে। সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এই কাজ করেছে বলে অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। এদিকে প্রতিবেশীরা বলছেন, রানী তার সন্তান বিক্রির টাকা দিয়ে বাসায় নতুন খাট ও টিভি কিনেছিলেন।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে পিডবিøউডি কলোনি এলাকাতে লাকি বেগমকে পাওয়া না গেলেও তার মা, বাবা ও প্রতিবেশী এক নারীকে (দাই) থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশু উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।