ফতুল্লার কুখ্যাত সন্ত্রাসী হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী সামেদ আলী ও তার সন্ত্রাসী পাঁচ ছেলেসহ তার পালিত গুন্ডা বাহিনীর যাবতীয় অমানবিক অত্যাচারের সুষ্ঠ তদন্ত ও সঠিক বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী বলেন, আমরা সিরাজদিখান, কেরানিগঞ্জ ও ফতুল্লা থানার শান্তিকামী মানুষ। উল্লেখিত অত্র এলাকার মানুষের সামনে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ছামেদ আলী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। গত ৩০ বছর যাবৎ তারা এই এলাকার লোকজনকে নানাভাবে হামলা, মামলা দিয়ে জিম্মি করে আসছে।
ছামেদ আলী ও তার বাহিনীর লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। মামলা হলেও তাদের দাপটে এলাকাবাসী তটস্থ থাকে। কেউ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। মুখ বুললেই তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতন। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ছামেদ আলী গং।
ওই মামলায় গত ২২ মার্চ জামিন নেওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসলে ছামেদ আলী গং হামলা চালায়। এতে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন গুরুতর জখম ও আহত হয়। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি।
সামেদ আলী (৬৫), ও তার পাঁচ ছেলে মোঃ ওসমান গনি, মোঃ রাজিব, মোহ সজিব, মোঃ হৃদয়, মোঃ আরিফ আকবর নগর ও অন্যান্য এলাকার নেশা আসক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে সন্ত্রাস বাহিনী গঠন করে দীর্ঘদিন যাবৎ ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ ও সিরাজদিখান থানাধীন এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের উপর জোর-জুলুম, বিভিন্ন অযুহাতে চাঁদাবাজি, জোড়পূর্বক জমি দখল, বেআইনিভাবে ইটভাটার জন্য ফসলি জমির মাটি কাটাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে বাড়িঘর লুট-পাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে থাকে।
এলাকার কিশোর ও বেকার যুবকদেরকে টাকা ও নেশার প্রলোভনের মাধ্যেমে তাদের সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য সংখ্যা দিন দিন বাড়িয়ে চলছে। এদের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জসহ কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থানায় হত্যা, জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মহিলা সাংবাদিক পেটানো ও ধর্ষণের মতো বিভিন্ন অপকর্মের একাধিক মামলা রয়েছে।
এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য একাধিকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে আবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে দেয়। গত ৩০ বছরের তাদের ক্রিমিনাল রেকর্ড খুঁজলেই এই তথ্যের প্রমাণ মিলবে।
সন্ত্রাসী ছামেদ আলী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর এইসব কর্মকান্ডে এলাকার সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে এবং প্রাণনাশের ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে বসবাস ও ব্যবসা করছে। অনেক ইটভাটার মালিক ব্যবসা বন্ধ করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিবাদীগণ ফতুল্লা থানাধীন হওয়া সত্ত্বেও সিরাজদিখান থানাধীন আকবরনগর এলাকায় এসে তাদের মনোনীত মেম্বার প্রার্থীকে সাপোর্ট না করায় এলাকার সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শন, মারপিট ও তাদের বাড়িঘরে লুটপাট করেন।
সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্য মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। আমি সমাজের একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে ও সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে ভুক্তভোগীদের ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিলে বিবাদীপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
আমাকেসহ আমার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন এমনকি সন্ত্রাসীরা নিজেদের দোকান ঘড়ে অগ্নি-সংযোগ করে আমাদেরকে আসামি করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন যা পিবিআই ও থানার তদন্ত কর্মকর্তার অনুসন্ধানে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
গত ২২ মার্চ তারিখে নারায়ণগঞ্জে কোর্ট থেকে বিবাদীদের দায়ের করা একটি মিথ্যা মামলার জামিন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসালে বিবাদীপক্ষ পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে দেশিও অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এলোপাথারী কুপিয়ে আমিসহ আমার ভাইদের গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে এই ঘটনায় ফতুল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের হয় (মামলা ৭৪/ ৩/২২ তাং ২৩.০৩.২২ইং)। হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে এই হামলা করা হলেও অদৃশ্য কারণে আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
আমরা সিরাজদিখান থানার আকবরনগর গ্রামের সকল সাধারন মানুষ উল্লেখিত কুখ্যাত সন্ত্রাসী হামেদ আলী ও তার সন্ত্রাসী পাচঁ ছেলে সহ তার পালিত গুন্ডা বাহিনীর সকল অমানবিক নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত বিচারের আওতায় এনে যোক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ছামেদ আলী গংদের কারণে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকাও দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আপনাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে এই সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ড গণমাধ্যমে তুলে ধরে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে আশা করি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাজ্জাদ নুর, ছামেদ আলী বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জয়নাল স্ত্রী ফাতেমা বেগম, তার শালী মিসেস রাসেদা প্রধান রাণী সহ অত্র এলাকার বুলবুল আহম্মেদ, কামরুল জামাল, মনির হোসেন, আবুল হোসেন, শুক্কুর মিয়া, পাগল চান সহ প্রমুখ।