শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

পিটিশন মামলায় আড়াইহাজারের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আসামি, প্রতিবাদে মানববন্ধন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২২, ৯.৫২ এএম
  • ৩৮৫ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় আদলতে দায়ের করা পিটিশন মামলায় জুনায়েদ (১২) নামে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। পিটিশন মামলা নং-৩৩/২০২২ইং)।

 

নারায়ণগঞ্জ আমলী আদালত “গ” অঞ্চলে এই পিটিশন মামলাটি করেছেন হবিবুর রহমান হবু (৪৪) নামে এক ব্যক্তি। তিনি সোনারগাঁও উপজেলার মহজুমপুর থানার বস্তুল এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। পিটিশন মামলাটির ৪ নম্বর আসামি হিসেবে ইলমদি খানকান্দি এলাকার ইব্রাহীমের ছেলে জুনায়েদ এর নাম রয়েছে। যার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২৬ বছর।

 

তবে এই গ্রামের মৃত ইব্রাহীমের ছেলে জুনায়েদ স্থানীয় ৯৬নং ইলমদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার রোল নং ৩৮। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই পিটিশন মামলায় আসামি জুনায়েদের বয়স ২৬ বছর উল্লেখ করা হলেও তার জম্ম সনদে জম্ম তারিখ উল্লেখ রয়েছে ১৫-১০-২০০৯ ইং। অর্থাৎ জন্ম সনদের হিসেব অনুযায়ী জুনায়েদের বয়স বর্তমানে ১২ বছর ৩ মাস।

 

পিটিশনে শিশু জুনায়েদ ও তার চাচা কাইয়ুমসহ মোট ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। অপর তিন আসামি হলেন- মফিজউদ্দিন মফেজ (৫০), হানিফা (৩৩) ও মোক্তার (৩৫)। তাদের সবার বাড়ি আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

 

তবে পিটিশন মামলাটি সাজানো বলে দাবি করে দ্রুত শিশু জুনায়েদসহ অন্যান্য আসামিদের অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী জুনায়েদের মা সুমী আক্তার। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগি পরিবারসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।

 

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা এগারোটায় উপজেলার ইলমদী বাজারের মোড় ঘটনাব্যাপি এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। মানবন্ধনে বক্তারা আদালতে দায়ের করা পিটিশন মামলাটি উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা দাবি করে আসামির নাম থেকে শিশু জুনায়েদ ও তার চাচাকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানান।

 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও উপজেলার বস্তুল এলাকার হাবিবুর রহমান হবুর ছেলে জহিরুল হক ওরফে জেসনো, একই এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে মফিজুল হোসেন ও আড়াইহাজার উপজেলার সেন্দী মাধবদী এলাকার মোসলেমের ছেলে নবী হোসেন মিলে তাদের লেগুনা গাড়িতে করে পোশাক শ্রমিকদের আনা-নেওয়া করতেন।

 

গত ১৩ জানুয়ারি ভোর ৫টার দিকে আড়াইহাজার উপজেলার ইলমদি বাজারে গেলে মামলার ১নং আসামী স্থানীয় আপরদী এলাকার সমুর ছেলে মফিজউদ্দিন কৌশলে নিহত তিন ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে দুইটি লেগুনায় তুলে মামলার পাঁচ আসামি মিলে হাতুড়ীসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরে তাদের ইলমদী বাগ নামক এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে ডাকাত বলে চিৎকার করেন।

 

এসময় এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্দেহভাজন তিন ডাকাতকে গণপিটুনি দেয়। পরে তারা তিনজনই মারা যায়। এ ঘটনায় আড়াইহাজার থানায় নিহত তিন ব্যক্তিসহ অজ্ঞাত আরো ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ করে একটি মামলা করেছেন ডাকাতের হামলার শিকার গাড়ির চালক হানিফ নামে এক ব্যক্তি।

 

মামলায় বাদি হানিফ উল্লেখ করেন, ওই রাতে ডাকাত দলের সদস্যরা শ্রমিকবাহী মিনিবাসের ভেতরে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে ৯ নারী-পুরুষ শ্রমিকের কাছ থেকে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী লুট করে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী তাদের গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। আড়াইহাজার থানায় মামলা নং-১৭(০১)২২ইং। অপরদিকে আড়াইহাজার থানার এসআই আব্দুর রহমান ঢালী বাদি হয়ে অজ্ঞাত ২০০-২৫০জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। যাহার নং-১৮(০১)২২ইং।

 

এদিকে পিটিশন মামলার বিবাদী কাইয়ুম বলেন, ২০২১ সালের ২৯ জুন তার ভাই চাল ব্যবসায়ী ইব্রাহিমকে ইলমদীর কান্দকাপাড়া এলাকার মোজাম্মেলের ছেলে এনামুলসহ আরও বেশ কয়েক জন মিলে হত্যা করে। এ ঘটনায় আড়াইহাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। যাহার নং-১(৭)২১ইং। তার অভিযোগ, মামলাটি তুলে নিতে বিবাদীরা নানাভাবে আমাকে হুমকী-ধমকী দিয়ে আসছে।

 

মামলাটি না তুলায় পরিকল্পিতভাবে একেঅপরের যোগসাজসে তিনি ও তার ১৩ বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ভাতিজা জুনায়েদের বিরুদ্ধে আদালতে পিটিশন মামলা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জুনায়েদের মা সুমি আক্তার দাবি করেন, তার স্বামী ইব্রাহিমকে সাত মাস আগে হত্যা করা হয়েছে। স্বামীর হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে আসামিরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার শিশু সন্তান জুনায়েদ ও ভাসুর কাইযুমের নামে আদালতে সাজানো হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবি আবদুল্লাহ আল মামুন ভূঁইয়া (রাশেদ) বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কেউ যদি আদালতে অথবা থানায় মিথ্যা মামলা করেন তবে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচালিত আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।

 

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো: আমীর খসরু বলেন, আদালতে পিটিশনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে আদালত যদি থানা পুলিশকে তদন্ত সাপেক্ষে কোন প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয় তবে সঠিক তথ্য প্রদান করে প্রতিবেদন দেয়া হবে। কেউ যাতে অন্যায়ভাবে হয়রানির শিকার না হয় পুলিশ সেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort