ভারতের বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচনের আগে শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন তিনি। বিতর্কিত ওই কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলন করছিলেন কৃষকরা।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। বিতর্কিত এই আইন নিয়ে অনড় অবস্থানে থাকলেও কৃষকদের দীর্ঘ আন্দোলনের কারণে সেটি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে মোদি কার্যত পিছু হটলেন।
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই কৃষি আইন কার্যকর করা নিয়ে এতোদিন অনড় অবস্থানে থাকা মোদির দাবি, ‘আমাদের লক্ষ্য সৎ ছিল। কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা কিছু কৃষককে আমরা বোঝাতে পারিনি।’
আন্দোলনের পথ ছেড়ে কৃষকদের আবার কৃষিকাজে ফিরে যেতেও অনুরোধ করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আসুন, সব আবার নতুন করে শুরু করি। এখন কাউকে দোষারোপের সময় নয়।’
শিখ ধর্মের প্রচারক গুরু নানকের জন্মদিনে মোদির এই ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থানকারী কৃষকদের বড় অংশই পাঞ্জাব এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের। তাদের মধ্যে শিখ এবং জাঠ জনগোষ্ঠীর কৃষকদের সংখ্যাও অনেক।
এছাড়া আগামী বছরের শুরুতেই পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে মোদির এই সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনটি কৃষি বিলে সংশোধন করে আইনে পরিণত করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্তানে ওই আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। বিশেষত, পাঞ্জাবে সেই বিক্ষোভের তীব্রতা ছিল অনেক বেশি।
রাজ্যজুড়ে রাস্তা অবরোধ, রেললাইন অবরোধ-সহ নানা আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানায় কৃষক সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, নতুন আইনের ফলে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা।
কৃষকরা দাবি করেছিলেন, বিতর্কিত ওই আইনের ফলে ফসল নিয়ে তাদের দরাদরির ক্ষমতা কমে যাবে, প্রচলিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হবেন তারা। পাশাপাশি, বেসরকারি এবং বড় সংস্থাগুলোর কাছে কৃষিপণ্য মজুত রাখার রাস্তাও উন্মুক্ত হবে।
যদিও সেসময় মোদি সরকারের পাল্টা দাবি ছিল, নতুন কৃষি আইনে কোনো ভাবেই কৃষকরা বঞ্চনার শিকার হবেন না। এমএসপি ব্যবস্থাও কার্যকর থাকবে। তবে আন্দোলনের কারণে শেষমেষ সেই বিতর্কিত আইন বাতিল করতে বাধ্য হলো দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।