শীত আর বৃষ্টি নাই, আমরা সকাল-সকাল ঘুম থাইকা উঠি। এরপর লাইগা পড়ি শহরের রাস্তা ঘাট পরিস্কারের কামে। আপনেরা উঠনের আগেই পরিস্কার কইরা লাই, আর বেতন পাই মাত্র দেড় থাইকা দুই হাজার টাকা; কথা গুলো বলছিলেন পরিচ্ছন্নকর্মী গীতা রানি (ছদ্মনাম)।
পাশে দাঁড়ানো পরিচ্ছন্ন কর্মী স্বপ্না দাস মাঝ খানে বলে উঠলেন, ‘সিটি করপোরেশনতো মানুষের জীবন মান উন্নয়ন করে, আমরাওতো সিটি করপোরেশনে থাকেই, আমগোতো জীবন মান বদলায় নাই। নাকি আমরা মানুষ না’।
স্বপ্না দাস আর গীতা রানির মতো আরও শতাধীক পরিচ্ছন্নকর্মী মঙ্গলাবার (২ আগস্ট) জড়ো হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রবেশদ্বারে। এ সময় বেতন বৃদ্ধিসহ ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সংগঠন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কিশোর লাল জানান, ‘এমন আরও ১২৪০ জন পরীচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে। যাদের কোন নিয়োগপত্র নেই। দৈনিক ১২০ থেকে ২১০ টাকা মুজুরীতে ৩ ক্যাটাগরিতে বেতন পান। এই বেতন থেকেই কেটে নেওয়া হয় ঘর ভাড়াসহ অন্যান খরচ। ফলে মাস শেষে অধিকাংশ পরীচ্ছন্ন কর্মীর ঘরে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে ফিরতে কষ্ট হয়ে যায়।’
গত কয়েক বছর যাবতই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বেতন বৃদ্ধিসিহ ২৬ দফা দাবি করছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। লিখিত ভাবে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশন, শ্রম দপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ও শিল্প পুলিশের কাছে। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল দাস বলেন, ‘আমরা সকালে উঠে এই, নগর পরিচ্ছন্ন করি। কিন্তু আমাদের প্রতি মেয়র মহদয়ের কোন দৃষ্টি নেই। দাবি আদায় করতে গিয়ে প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়রের গাড়ির নিচে পড়ে মারা যাবো। তারপরেও দাবি আদায় আমরা করেই যাবো।’
৬ দফা দাবি লাইভ নারায়ণগঞ্জের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:-
১/ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ মোতাবেক শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান করতে হবে।
২/ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কর্মরত সকল পরিচ্ছন্ন কর্মীদের চাকুরী স্থায়ী করতে হবে।
৩/ সকল পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নুন্যতম দৈনিক হাজিরা ৬৫০ টাকা ও ট্রাক শ্রমিকদের ৭৫০ টাকা করতে হবে এবং প্রত্যেক শ্রমিকের বেতন সমপরিমান ঈদ বা পূজার বোনাস প্রদান করতে হবে।
৪/ প্রতি ওয়ার্ডে ২ জন করে ডোম নিয়োগ দিতে হবে।
৫/ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার সময় যদি কোন শ্রমিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে, তাহলে ৫ লাখ টাকা প্রদান করতে হবে। এছাড়া যদি স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুবরণ করে, তবে তার কাষ্ট বা দাফনের জন্য পূর্বের বরাদ্দ ৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে।
৬/ সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর অঞ্চলে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের স্থায়ী বসবাসের জন্য বহুতল ভবন বাসস্থান তৈরি করতে হবে।