রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আজ

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২, ৪.২৮ এএম
  • ১৬২ বার পড়া হয়েছে

মর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এ সেতুর উদ্বোধন করবেন।

 

এর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। কাল রোববার সকাল ৬টা থেকে জনসাধারণের গাড়ি চলাচলের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হবে। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে উৎফুল্ল মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দ-উৎসব।

সারা দেশের জেলায় জেলায় সাজসাজ রব উঠেছে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে বর্ণাঢ্য আয়োজনের সব প্রস্তুতি। সব মিলিয়ে এ সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।

পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে বেগবান হবে দুই পারের অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিকাশ ঘটবে। এপার-ওপারের কৃষি ও শিল্পপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা দ্রুত হবে। বিকাশ ঘটবে পর্যটন শিল্পের। বাড়বে অর্থের প্রবাহ ও হাতবদল। সবমিলিয়ে এই সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। বছরে দশমিক ৮৪ শতাংশ দরিদ্রতা কমবে এবং জিডিপিতে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখবে।

১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হয়। কিন্তু পদ্মা নদীতে সেতু না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে যাতায়াতে নৌপথে ফেরি পারাপার করতে হতো। আজ পদ্মা সেতুর চালুর মধ্য দিয়ে মূলত সারা দেশেই সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসছে। শুধু তাই নয়, এ সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গেও যুক্ত করছে বাংলাদেশকে।

সেতু নির্মাণকাজ শুরুর আগেই দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ও এ ঘটনায় বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোর ঋণচুক্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার মতো বৈশ্বিক অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তেমনি নিজস্ব তহবিল থেকে এত বড় অঙ্কের টাকার জোগান দেওয়া, প্র্রাকৃতিক বিপর্যয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতাও ছিল।

এছাড়া ছিল কারিগরি সংক্রান্ত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ। সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার মধ্য সারা বিশ্বে নিজেদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার জানান দিল বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা, সমুদ্র ও স্থলবন্দর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পর্যটনের নতুন সুযোগ তৈরি হলো।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন বিশ্বদরবারে দেশ ও জনগণকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে।

আর এ দিনকে ‘এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন আখ্যায়িত’ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো। তিনি বলেন, বিশেষ করে শিল্পায়ন ও পর্যটন শিল্পে এ অঞ্চলের উন্নয়নে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে পদ্মার দুই পারেই বিশেষ আয়োজন থাকছে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে লঞ্চ ও বাসযোগে বিপুলসংখ্যক উৎসুক মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শুক্রবার রওয়ানা হয়েছেন। মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

এ সমাবেশে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক ও মিশনপ্রধান, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন। সেখানে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধন খাম ও সিলমোহর প্রকাশ করা হবে।

মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর টোল দিয়ে গাড়িতে জাজিরায় যাবেন। সেখানে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন এবং মোনাজাতে অংশ নেবেন। পরে তিনি কাঁঠালবাড়ীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন।

২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তও নেন তিনি। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর এই সেতুর নির্মাণকাজেরও উদ্বোধন করেন। আজ তার হাতেই চালু হতে যাচ্ছে গাড়ি চলাচল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পদ্মা পারে গাড়ি ও নৌযান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন। এসব ব্যানার ও ফেস্টুনে সেতু নির্মাণে বাঙালির অদম্য জয় ও আত্মমর্যাদাসংক্রান্ত বিভিন্ন স্লোগান শোভা পাচ্ছে।

এদিকে সেতু পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার আগ্রহে অপেক্ষা করছেন লাখ লাখ মানুষ। রোববার সকাল ৬টা থেকে জনসাধারণের জন্য এ সেতু খুলে দেওয়া হবে। তবে কিছু বিধিনিষেধ মেনে সেতুতে চলাচল করতে হবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, সেতুর আয়ুষ্কাল ১০০ বছর ধরা হয়েছে। এছাড়া সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজও চলবে। এসব কারণে সেতুতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।

সেতুর ওপর দিয়ে তিন চাকাবিশিষ্ট যান যেমন- রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে না। হেঁটেও সেতু পার হওয়া যাবে না। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া ও ৫.৭ মিটার উচ্চতার বেশি মালামাল নিয়ে যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে যেতে পারবে না। সেতুতে গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা ও হাঁটা এবং ময়লা ফেলা নিষেধ।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সক্ষমতার প্রতীক : প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট অনেক চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এ সেতু নির্মাণ শেষ করা হলো। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ২০১২ সালের ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের পর সেতু নির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় তৈরি হয়।

অনেক সমালোচক তখন সরকারের সমালোচনাও করেন। ওই ঘটনার একপর্যায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবুও দাতা সংস্থাগুলো এ সেতুর অর্থায়নে ফিরে আসেনি। কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলাও প্রমাণিত হয়নি। এতে সেতু নির্মাণকাজ পিছিয়ে যায়।

এমন প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালের ৯ জুলাই এক বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বৈরী প্রকৃতি মোকাবিলা করে এ সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। পদ্মা নদীর স্রোতের তীব্রতা প্রতি সেকেন্ডে ৩ থেকে সাড়ে ৪ মিটার। নদীর প্রবাহমাত্রা প্রতি সেকেন্ডে দেড় লাখ ঘনমিটার। নদীর তলদেশে স্রোতে ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যায়। এ অবস্থায় নদীশাসন ও সেতু নির্মাণকাজ বারবার ব্যাহত হয়। কয়েকবার ভেঙে যায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, ডুবে যায় অনেক সরঞ্জামাদি।

এছাড়া পদ্মা সেতুর পাইল বসানোর সময়ে নদীর তলদেশের কাদামাটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ কারণে ওইসব স্থানের ২২টি পিলারের নতুন করে ডিজাইন করতে হয়েছে। ওই ডিজাইন করতে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা।

অনেক রেকর্ড : শুধু অর্থনৈতিক নয়, কারিগরি দিক থেকেও অনেক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে পদ্মা সেতু। বিশ্বে আমাজনের পরই খরসে াতা নদী হিসাবে পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণ সফলভাবে শেষ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। পদ্মা নদী ভাঙনপ্রবণ ও খরস্রোতা হওয়ার কারণে এ সেতুর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পিলার ও পাইল বসানোর ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে; তা বিশ্বে প্রথম।

এ সেতুতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১২২ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত পাইল বসানো হয়েছে; যা ৪০ তলাবিশিষ্ট ভবনের সমান। অর্থাৎ এসব পাইল নদীর পানি ভেদ করে কাদামাটির ১২২ মিটার পর্যন্ত গভীরতা পর্যন্ত ঠেকেছে। এ সেতুতে চার হাজার টন সক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ধাক্কা দিলেও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। পদ্মা সেতুতে ভূমিকম্প প্রতিরোধক হিসাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে।

এর ক্যাপাসিটি ৯৮ হাজার কিলোনিউটন। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্পন সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে সেতুর। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হ্যামার ব্যবহার করা হয়েছে; যার সক্ষমতা তিন হাজার ৫০০ কিলোজুল। পিলারের ওপর স্প্যান উঠানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ৪ হাজার টন ক্যাপাসিটির ভাসমান ক্রেন। পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন করা হচ্ছে। নদীশাসন কাজে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি চুক্তি করা হয়েছে। নদীশাসন কাজে এত বড় অঙ্কের একক চুক্তি এটিই প্রথম।

একনজরে পদ্মা সেতু : বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রথম দ্বিতল সেতু। মূল পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। সংযোগ সেতুসহ এর দৈর্ঘ্য ৯.৮৩ কিলোমিটার। সেতুটি অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ‘এস’ আকৃতিতে তৈরি। সেতুতে ২২ মিটার প্রশস্ত চার লেনের সড়ক রয়েছে। চার লেনের মাঝে সড়ক বিভাজক দিয়ে যাওয়ার পথে দুই লেন ও আসার পথে দুই লেন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেতুতে টোল প্লাজা ছাড়া আরও কোথাও থামার সিগন্যাল নেই। সেতুতে গাড়ি সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে। যদিও মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার অনুমোদিত রয়েছে।

সেতুতে গাড়ি থামানো বা হেঁটে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া তিন চাকার গাড়ি সেতুতে চলাচলের অনুমতি নেই। তবে মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ ১৩ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সেতুর নিচের অংশে দ্রুতগামী ট্রেন লাইন বসানো হচ্ছে। যাত্রীবাহী ট্রেন ১৬০ কিলোমিটার ও মালবাহী ট্রেন ১২০ কিলোমিটার বেগে এ সেতুতে চলতে পারবে।

সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান দিয়ে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পিলারের নিচে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ ১২২ মিটার পর্যন্ত পাইল বসানো হয়েছে। ২২টি পিলারের নিচে সাতটি করে ও বাকি ২০টি পিলারের নিচে ছয়টি করে পাইল রয়েছে। পাইলের ব্যাস ৩ মিটার। খরস্রোতা নদী পদ্মার প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এতে নদীর তীব্র স্রোত ও তলদেশ ক্ষয়ের মতো বিপর্যয়ে টিকতে পারবে।

সেতু নির্মাণের উপাদান : সেতুটি মূলত ছয়টি উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সেতু নির্মাণে তিন লাখ ১৪ হাজার টন পাথর, দুই লাখ ৫২ হাজার ৫৯৬ টন সিমেন্ট, দুই হাজার ১১৪ টন মিহি (আমদানিকৃত বিশেষ ধরনের) সিমেন্ট, দুই লাখ ৮৮ হাজার ৮৮২ টন স্টিল প্লেট, ৯২ হাজার ২৮৬ টন ডিফর্মড বার এবং দুই লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টন বালু ব্যবহার করা হয়েছে।

সেতুটি নির্মাণ করেছে চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার চুক্তিতে এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণে লকডাউন, বৈরী আবহাওয়া ও নদীভাঙন, ২২টি পিলারের নতুন করে ডিজাইনসহ নানা জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ের ৪৩ মাস বেশি লেগেছে। গত ২১ জুন পর্যন্ত সেতু নির্মাণে বিল দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার ৯৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

আরও যেসব কাজ : সেতু নির্মাণ ছাড়া আরও ১১ ধরনের কাজ করা হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-পদ্মার দুই পারে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীশাসন। এ কাজে ব্যয় ধরা হচ্ছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত ২১ জুন পর্যন্ত ৮৭০৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সেতুর দুই পারে ১২.১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক ও দুটি থানাভবন এবং তিনটি সার্ভিস এরিয়া নির্মাণ করা হয়েছে। এ কাজে ১০৯৭ কোটি ব্যয় ধরা হলেও গত ২১ জুন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৮৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা।

প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের প্লট ও বাড়ি দেওয়া এবং তাদের কর্মসংস্থানও করা হয়েছে এ প্রকল্পের আওতায়। পুনর্বাসন কার্যক্রমে এক হাজার ৫১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। গত ২১ জুন পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে ১১১৬ কোটি টাকা। প্রকল্প এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এক লাখ ৭৩ হাজার ২৯৪টি গাছ লাগানো হয়েছে। প্রকল্প শেষে আরও দুই লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

সার্বিকভাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। গত ২১ জুন পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি ৯১.৮৫ শতাংশ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort