পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ পেয়েছেন নেদারল্যান্ডসের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে। তিনি এমন একটা সময়ে ন্যাটোর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন যখন ইউক্রেনের যুদ্ধ ন্যাটোর দোরগোড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ও ট্রান্সআটলান্টিক জোটের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত মনোভাব নিয়ে অনিশ্চয়তা ঝুলছে।
বুধবার (২৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহ রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইওহানিস ন্যাটোর মহাসচিব পদের লড়াই থেকে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। এতে একমাত্র প্রার্থী রুটের নিয়োগ কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
রুটে আগামী ১ অক্টোবর বর্তমান মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টলটেনবার্গ এক দশকেরও বেশি সময় ন্যাটো জোটের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর ধারাবাহিকতা প্রদানের জন্য তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
আজ বুধবার (২৬ জুন) ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে ৩২টি সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা রুটেকে পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে মার্ক রুটের এই নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্টলটেনবার্গ এবং তার সাফল্য কামনা করেছেন।
স্টলটেনবার্গ ‘এক্স’ পোস্টে লিখেছেন, ‘রুটে একজন সত্যিকারের ট্রান্সঅ্যাটলান্টিসিস্ট, একজন শক্তিশালী নেতা এবং একজন সম্মতি-নির্মাতা। আমি জানি, আমি ভালো হাতে ন্যাটো ছেড়ে যাচ্ছি।’
ন্যাটোর মহাসচিব হওয়ার প্রসঙ্গে রুটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেছেন, তিনি এই দায়িত্বটি নিয়ে প্রচণ্ডভাবে উন্মুখ হয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘জোট আমাদের সম্মিলিত নিরাপত্তার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে রয়েছে এবং থাকবে। এই সংস্থার নেতৃত্ব দেওয়া এমন একটি দায়িত্ব যা আমি হালকাভাবে নেই না।’
মার্ক রুটে ২০১০ সাল থেকে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ১৩ বছর ধরে দায়িত্বে থাকা রুটে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরে ঘোষণা দেন এবং ন্যাটোর দায়িত্ব নিতে নিজের আগ্রহের কথা জানান। শুরুতেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানিসহ জোটের মূল সদস্যদের কাছ থেকে প্রাথমিক সমর্থন অর্জন করেন। যদিও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো সেসময় যুক্তি দেয় যে, তাদের অঞ্চল থেকে প্রথমবারের মতো কারও যাওয়া উচিত। তবে পরবর্তীতে প্রায় সব সদস্য রাষ্ট্রই রুটেকে সমর্থন করেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের তীব্র সমালোচক ও ইউক্রেনের কট্টর মিত্র হিসেবে রুটে বেশ জনপ্রিয়।
রয়টার্সের খবর বলছে, ন্যাটোর নতুন প্রধান হিসেবে রুটেকে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের জন্য মিত্রদের সমর্থন বজায় রাখার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ন্যাটোকে সরাসরি মস্কোর সঙ্গে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। এছাড়া আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসতে পারেন এমন সম্ভাবনার সাথেও তাকে লড়াই করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন ন্যাটো নেতাদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। কারণ, ন্যাটোর কোনো সদস্যের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটলে মার্কিন সহায়তার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন ট্রাম্প।