প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে এখনো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টাই সুবিধামতো সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সমসাময়িক ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।
অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে এখনো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা বা তার দপ্তর থেকে নির্বাচনের ডেট দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের তারিখ প্রধান উপদেষ্টাই ঘোষণা করবেন। ওনার পক্ষ থেকে তারিখ দেওয়া হবে। বাকি যারা বলেছেন, তারা হয়ত নিজেদের মতামত দিয়েছেন, তবে সেটা কংক্রিট না।
ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারি-চালিত অটোরিকশা চলাচল সীমিত করার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবে সরকার বলে জানান উপ প্রেস সচিব কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করার। আমরা আশা করি, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাটারি-চালিত অটোরিকশা শহরের রাস্তায় চলতে পারবে কিনা তা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি সমাধান খুঁজে পেতে চায় সরকার।
এক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, গুম কমিশন এখনো কোনো সুপারিশ সরকারকে দেয়নি। আগামী (ডিসেম্বর) মাসের মাঝামাঝি সরকারকে একটি প্রতিবেদন তারা দেবে। সেই প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে সরকার নেবে।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠনের সমালোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে আইন মেনে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, জনপ্রশাসনে বদলি-পদোন্নতি স্বাভাবিক বিষয়। যেহেতু দেশে একটা পটপরিবর্তন হয়েছে। এর কারণে জনপ্রশাসনের রদবদল জনদাবি। সরকারও মনে করেছে কাজে গতিশীলতা আনার জন্য প্রশাসনে কিছু অবশ্যম্ভাবীয় রদবদল করতে হবে। সেই অনুযায়ী সরকার কাজ করছে। শূন্যপদে উপযুক্ত কাউকে মনে করা হলে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। প্রশাসনে গতিশীলতা আনার জন্য নিয়মিত করে যাবে।
বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদ মজুমদার বলেন, আপনারা দেখেছেন এর আগের সরকার কীভাবে ভিন্নমত দমন করেছে। ভিন্নমতাবলম্বীদের নানাভাবে হয়রানি করেছে। বিদেশে আসা-যাওয়া থামাতে সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মীসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের বিশাল তালিকা ইমিগ্রেশনে দেওয়া হয়েছিল। সরকার চেষ্টা করছে তালিকাটা হালনাগাদ করতে। সেখানে যদি কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ বা প্রমাণ থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। অভিযোগ না থাকলে সবাই স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করতে পারবে। কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় এ বিষয়ে সরকার সচেতন আছে। নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদকের বিষয়ে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, অন্য কোনো বিষয়ে সরকারের নজরে আনা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সরকার এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করবে। সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে একটি নীতিমালার আলোকে অবশ্যই সেখানে ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিকদের নাম থাকবে না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে বলা হয় কাউকে বিদেশগমনে বাধা দিতে হবে বা কোর্টের অর্ডার থাকে। পুরো বিষয়টি যাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে থাকে, দেশের সব মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকে। এগুলো স্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে আসবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদ মজমুদার বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যু কমে আসবে সেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অপপ্রচারের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আজাদ মজুমদার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কোনো ধরনের গুজব যেন না ছড়ায় তা প্রতিরোধে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রেস উইং থেকে আলাদা পেজ খুলে মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। একইসঙ্গে গুজব প্রতিরোধ সরকারের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে গুজব ছড়িয়ে বা অহেতুক আতঙ্ক ছড়িয়ে সমাজে কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।
যানজটের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, যানজট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেটা চলমান আছে। এর বাইরেও কিছু কারণ আছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারণে, কোনো না কোনো গ্রুপ সড়কে অবস্থান নিয়েছে। সে কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজট ঢাকা শহরের পুরোনো সমস্যা। সড়কে অবস্থানের কারণে যানজট আরও বাড়ছে। সরকার চেষ্টা করছে সবার দাবি-দাওয়া শোনার। কারো দাবি যৌক্তিক হলে সমাধানের চেষ্টা করব। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব যানজট হওয়ার মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবেন। সরকারের নির্দিষ্ট চ্যানেলে জানালে যানজটের বাড়তি ভোগান্তি থাকবে না।