নারায়ণগঞ্জেও প্রভাব পড়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর। ভোর থেকেই শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বৃষ্টির পরিমাণ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ, পথচারী, কর্মজীবীসহ সব শ্রেণির মানুষেরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে, জীবন ঝুঁকি নিয়েই শীতলক্ষ্যা পাড়ি দিয়ে চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের যেতে দেখা গেছে কর্মস্থালে।
সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি মানুষ রাস্তায় নামেননি। তবে যারা কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছেন, তাদের অনেককেই সময় অনুযায়ী গণপরিবহন কম থাকায় বাধ্য হয়ে সিএনজি, রিকশা কিংবা ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও প্রাইভেট গাড়িতে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে।
পথচারি সারওয়ার মিয়া জানায়, ঢাকা মেডিকেলে পরিবারের এক সদস্য ভর্তি। তার জন্য বাধ্য হয়ে দ্বারের বাহিরে আসতে হয়েছে।
কথা হয় সবুজ শিকদারের সাথে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নাই বাধ্য হয়েই অফিসে যেতে হবে। অফিসের বসকে ফোন দিয়ে আজকের জন্য ছুটি চেয়েছিলাম। কিন্তু কাজের চাপ থাকায় সেই ছুটি দেয়া হয় নাই। তাই দুর্ভোগ নিয়েই অফিসের পথে ছুটছি।
এদিকে, শহর কেন্দ্রীক গার্মেন্টস ও কল কারখার শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শীতলক্ষ্যা পাড়ি দিয়েছেন। একই ভাবে বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে উত্তাল নদীতে নৌকা বেয়েছেন মাঝিরা। প্রতিদিনের মতো চালু ছিলো ইজারাদার ঘাট, তবে পারাপারের যাত্রী সংকট পোহাতে হয়েছে তাদেরও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইজারাদার ঘাটে কর্মরত এক ব্যাক্তি জানায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমাদের ট্রলার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমরা দেখলাম সব যদি বন্ধ করি তাহলে ওপারের মানুষের সাথে এপারের মানুষের একেবারে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যাবে। তাছাড়া সকালে মানুষ গার্মেন্টস গুলোতে আসতে পারবে না। তাই আজ এই অবস্থায়ও ঘাট চালু রেখেছি।
পারাপার হচ্ছিলেন আসমা বেগম। তিনি জানান, অনেকটা দুর্ভোগকে অতিক্রম করেই বাসা থেকে ঘাটে এসেছি, কিন্তু নদীর পারে বাতাস আর বৃষ্টির বেগ দেখে আবার বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু জরুরি ব্যাংকে যাওয়ার দরকার ছিলো কারণ মায়ের ঔষধ কিনতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়েই নদী পার হলাম। এখন ঠিকঠাক মতো বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই বেচেঁ গেলাম।
অন্যদিকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারণে নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন সড়কে ও ওলিগলিতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হলেই ড্রেনের ময়লা পানির সাথে বৃষ্টির পানি মিলে জমাট হয়ে ছিলো। ফলে রিকশার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। অন্যদিকে রিক্সার ভাড়াও ছিলো অন্য দিনের তুলনায় বেশী।
গলাচিপার বাসিন্দা অনিক বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় জলাবদ্ধতায় অবস্থা খারাপ। কিন্তু অফিসে যেতে হবে, তাই দীর্ঘক্ষণ রিকশার জন্য ওয়েট করতেছি। একটা রিকশা পেয়েছিলাম কিন্তু ভাড়া দ্বিগুনের থেকেও বেশী চেয়েছে।
মাসদাইর এলাকার মো. আল মেহেদী জানায়, কর্মস্থলে সাড়ে ৯টায় পৌঁছাতে হয়। কিন্তু আজ বাড়ির সামনেই ১০টা বেজে গেছে। জানিনা চাকরি থাকবে কিনা। অনেক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছি গাড়ির জন্য, তাই আপাতত ময়লা পানি দিয়েই হেটে যাচ্ছি।