জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, নিত্যপণ্যের দাম ও পরিবহন ভাড়া কমানোর দাবি এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে সারাদেশে ন্যায় নারায়ণগঞ্জে অর্ধদিবস হরতাল পালন করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ২নং রেলগেট থেকে শুরু করে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে মিছিল করেন বাম জোটের নেতৃবৃন্দ।
নগরীর চাষাঢ়ায় হরতালের মিছিল নিয়ে গেলে, সেখানে একটি টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। পরে পুলিশি বাধার সমুক্ষিন হয় তারা। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে মন্ডলপাড়া এলাকায় আসতে চাইলে বঙ্গবন্ধু সড়কের কালির বাজার ব্যাংকের মোড় এলাকায় পুলিশ ফের বাধা দেয়। পুলিশের সাথে তর্কবিতর্ক হয়ে মিছিল চলমান রাখে, এবং নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে আরেকটি টায়ার জ্বালায় তারা। পরে ২নং রেলগেট এলাকায় আসলে ফের পুলিশি বাধার সমুক্ষিণ হয় বাম জোটের নেতৃবৃন্দ। এ সময় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কি হয় বাম জোটের নেতাদের সাথে। পরে মিছিল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে ডি.আই.টি এলাকায় আরেকটি টায়ার জ্বালায় তারা। পরে মন্ডলপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে চাষাঢ়ায় গিয়ে মিছিল শেষ করে। এদিকে, হরতালের মিছিল শেষ করে ২নং রেলগেট এলাকায় সমাবেশ করেন তারা।
বাম গণতান্ত্রিক জোট নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক ও বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক নিখিল দাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্ত্তী, বাসদের জেলার সদস্য সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, সদস্য সেলিম মাহমুদ, বেলায়েত হোসেন, এস.এম কাদির, সিপিবির জেলা সদস্য আবদুল হাই শরিফ, বিমল কান্তি দাস, ইকবাল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ছাত্র নেতা মুন্নি সরদার, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ছাত্র নেতা সংহতি ঘোষ রমা প্রমুখ।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফজিুল ইসলাম বলেন, আমরা যে দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি, এটা শুধু আমাদের বাম নেতাদের দাবি নয়। যারা সরকারি দলের সমর্থন আছেন, যারা বিরোধী দলের সমর্থন আছেন, সবাই বাজার থেকে কিনে খেতে হয়। কারণ এটাতে আমরা সকলেই ভুক্তভোগী। যদিও আপনাদের মন্ত্রী এমপিদের বাজারে যেতে হয় না। আমাদের কাছে খতিয়ান আছে, আমরা জানি কোন মন্ত্রী এমপিদের বাড়িতে বাজার পৌঁছে দেয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হলে তাদের কিছু আসে যায় না। তাদের ছেলে মেয়েদের আমাদের বাংলাদেশের স্কুলে পড়াশোনা করতে হয়না। আমাদের দেশে যখন খাদ্য সংকট দেখা দেয়, তখন তারা সিন্ডিকেট করে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ক্রয় করে বেশী দামে জণগনের কাছে বিক্রি করে।
বাম গণতান্ত্রকি জোট নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক ও বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক নিখিল দাস বলেন, চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, মাংস, ডিমসহ বাজারে প্রতিটা জিনিসের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। এতে সাধারণ জনগণের বিশেষ করে নিন্ম আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশের অনেক মানুষ তাদের খাবার কমিয়ে দিয়েছে। বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের ঢামাঢোলে চাপা পড়ছে সাধারণ মানুষের কান্না। এই সরকার রাতের আঁধারে ক্ষমতায় আসার ফলে জনগণের প্রতি তার কোন দায় নেই। তাই বেআইনিভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার কোন দ্বিধা করেনি। ফলে অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার আবারও ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে। দমন পীড়ন করে সরকারের গণবিরোধী নীতির বিরুদ্ধের আন্দোলনকে ধ্বংস করতে চায়। জনস্বার্থে আজকের বাম জোটের হরতালে সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতার ও হামলা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে হরতাল পালন কালে বারে বারে পুলিশি বাধাঁর সম্মুখীন হতে হয় । আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এ সময় জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের দাম না কমালে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুসিয়ারি দেন নেতৃবৃন্দ।