দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাচঁটি আসনে ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেছে। তাঁদের মধ্যে ৫ জন নির্বাচিত হলেও ২৭ প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। আর দুইজন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে যেতে না পারলেও জামানত হারানোর সাড়িতে পড়েননি। নিয়ম মতে, নিজ নির্বাচনী এলাকায় গৃহত বৈধ ভোটের শতকরা সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট পেলে সম্মান জনক হয়। আর তা না পেলে জমা দেয়া জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ৯ জন, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ৫, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ৮ জন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ৮ জন ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেন। এর মধ্যে জেলার পাঁচটি আসনের মোট চারটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের ও একটিতে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। ৪৫ হাজার ৭৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান পান কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়া।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে এক লাখ ৬৮ হাজার ২৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে এক লাখ ১২ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। এদিকে ৩৫ হাজার ৮১১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান পান লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এক লাখ ৯৫ হাজার ৮২৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এক লাখ ৫২ হাজার ২৮৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান।
জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রার্থীরা হলেন,
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারানোর তালিকায় আছেন ৭ জন। এর মধ্যে রয়েছেন তৃনমূল বিএনপির মহাসচিব সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচন করা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ১ শ’ ৯০ভোট । এই আসনে ২ লাখ ১২ হাজার ৬২৪ ভোট পড়েছে। সেই হিসেবে তৈমুর আলম মাত্র ১.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গোলাম মূর্তজা গাজী। তিনি ভোট পান ৩৯১। ভোটের হিসেব মতে গোলাম মূর্তজা এক শতাংশ ভোটও পাননি। জাকের পার্টির মোহাম্মদ যোবায়ের আলম ভূঞা গোলাপ ফুল প্রতীকে পান ৬০৪ ভোট। ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ জয়নাল আবেদীন চৌধুরী পান ২৯৬ ভোট। আলমিরা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান ১৬৫ ভোট পান। চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্টের এ কে এম শহীদুল ইসলাম ৮২০ ভোট পান। অপর দিকে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ১ হাজার ৫৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসন
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই জামানত হারিয়েছেন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আলমগীর সিকদার লোটন দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ ৭ হাজার ২৫৬ ভোট পেয়েও জামানত হারিয়েছেন। মো. আবু হানিফ হৃদয় তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) ৬৪৫ ভোট পেয়েছেন। তিনিও জামানত হারিয়েছেন। গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির গোলাপ মো. শাহজাহান ভোট পান ১ হাজার ৫৩৮। ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মো. শরিফুল ইসলাম ১ হাজার ৪২৮ ভোট পান।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসন
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের ৮ প্রার্থীর ৬ জনই জামানত হারিয়েছেন। জামানত হারিয়েছেন ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ.এইচ.এম. মাসুদ ভোট পান ২৫৯। নোঙ্গর প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর এ.বি.এম ওয়ালিউর রহমান খান ৪৬৭ ভোট পান। কুলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশ প্রার্থী নারায়ণ দাস পেয়েছেন ২৫১ ভোট। একতারা প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন ৭৬৪ ভোট পান। ছড়ি প্রতীকে মো. আরিফ বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট পান ১৬৩ ভোট। ফুলের মালা প্রতীকে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (বিটিএফ) মো. মজিবুর রহমান মানিক ৪৮৭ ভোট পান।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ৮ জন প্রার্থী ৭ জনই জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমুল বিএনপির মো. আলী হোসেন ভোট পান ১৯৮৭। ডাব প্রতীকে বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্টির মো. গোলাম মোর্শেদ রনি ৫৫১ ভোট পান। মশাল প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের মো. ছৈয়দ হোসেন ১ হাজার ২৩ ভোট পান। গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. মুরাদ হোসেন জামাল পান ৭ হাজার ২৬৯ ভোট। আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. শহীদ উন নবী পান ৭২৭ ভোট। একতারা প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বি.এস.পি) মো. সেলিম আহমেদ ১ হাজার ৪১৮ ভোট পান। চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. হাবিবুর রহমান ১ হাজার ৯৫৫ ভোট পান।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসন
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনই জামানত হারিয়েছেন। চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের এ এম এম একরামুল হক পান ৬ হাজার ৬৭৬ ভোট। একতারা প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বি.এস.পি) ছামছুল ইসলাম ১ হাজার ৭১৮ ভোট পান। সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির মোঃ আবদুল হামিদ ভাসানী ভূঁইয়া পান ১ হাজার ৮৩১ ভোট।