রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

নাসিকের গাড়ি চালকের কোটি টাকার আলিশান বাড়ি, নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

  • আপডেট সময় বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ১.১২ পিএম
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

ভয়েজ অব নারায়ণগঞ্জ রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক মো. জসিম উদ্দিন সামান্য বেতনে চাকরী করে আলিশান বাড়ির মালিক বনে গেছেন। সিটি করপোরেশনে চাকরী বাণিজ্য করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সাালের ১৮ ডিসেম্বরে দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে দুই গাড়ি চালক সহ তিন জনকে চাকরীচ্যুত করে সিটি করপোরেশন। তবে সম্প্রতি মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে সেই চালক ও কর্মচারীদের ফের চাকরীতে পুনর্বহাল করার অভিযোগ উঠেছে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এনজিওর ময়লা আল আমিন নগর ডাম্পিংয়ে অপসারণের সময় চালক মো. আক্তার হাতেনাতে ধরা পড়ে। এভাবে প্রায় দেড় মাস ধরে ময়লা অপসারণ করে আসছে বলে তদন্ত করে সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিয়েছেন। এতে প্রত্যেক গাড়ি প্রতি বিগত দেড় মাসে ৬৫ হাজার ৪০০ টাকার ডিজেল খরচ হয়েছে। মূলত কঞ্জারভেন্সী সুপারভাইজার মো. আসাদুজ্জামান নূর গোপন চুক্তির মাধ্যমে মাসিক ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে গাড়ি চালকদের দিয়ে এসজিওর ময়লা অপসারণ করে আসছেন। এই ঘটনায় তৎকালীন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী কঞ্জারভেন্সী সুপারভাইজার মো. আসাদুজ্জামান নূর, গাড়ি চালক আক্তার, জাহাঙ্গীর ও নয়ন কে চাকরী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে ওই সময় বিভিন্ন জনকে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে নয়ন ফের চাকরীতে ফেরে। তবে বাকি তিন জনকে চাকরীতে ফিরতে পারেনি। অবশেষে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তার ফের চাকরীতে যোগদান করেছেন। এ নিয়ে চারদিকে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তারা চাকরীতে পুনর্বহাল হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। আর সেই টাকার লেনদেন হয়েছে গাড়ি চালক জসিমের মাধ্যমে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের ২৩ নং ওয়ার্ডের সল্পের চক এলাকায় গাড়ি চালক জসিম উদ্দিনের তিন তলা আলিশান বাড়ি রয়েছে। আলিশান ভবনের ভেতরে দৃষ্টিনন্দন ইন্টোরিয়র ডিজাইনে আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ভবনের সামনের তার মালিকানাধীন জমিও রয়েছে। এছাড়া তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় অনেক জমি-সম্পদ রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে আসা যাওয়া বাবদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক মো. জসিম মিয়া প্রতিদিন ৬০ লিটার অকটেন ও দেড় হাজার টাকার গ্যাস নিয়ে থাকে। অথচ এতোটুকু সড়ক অতিক্রম করতে এতোখানি অকটেন ও গ্যাস প্রয়োজন নেই। এখান থেকে তিনি বেঁচে যাওয়া জ্বালানি তিনি বাইরে বিক্রি করে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা আয় করে থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের চালক আজহার বলেন, শুনেছি, সুপারভাইজার সহ দুই গাড়ি চালককে অনেক আগে চাকরীচ্যুত করা হয়েছিল। পরে কিভাবে ফের তাদেরকে চাকরীতে যোগদান করেছে তা জানা নেই। আর বন্দরে গাড়ি চালক জসিমের তিন তলা বাড়ি আছে এটা সত্য। তবে সেই বাড়ি তৈরির করার অর্থের উৎস কি তা জানা নেই। তবে আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে চাকরী করে বাড়ি তৈরি করা তো দূরের কথা সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। অথচ জসিম ১৬ বছর ধরে চাকরী করে কিভাবে বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে তা জানা নেই। জসিমের বাড়ি সহ জমির মূল্য প্রায় কোটি টাকার উপরে। এটা আমাদের অফিসের সবাই জানে।

একই সুরে কথা বললেন সিটি করপোরেশনের আরেক গাড়ি চালক নয়ন মিয়া। তিনি বলেন, আমরা শুনেছি টাকার বিনিময়ে তাদেরকে চাকরী পাইয়ে দিয়েছেন। তবে চালক জসিম তিন তলা বাড়ি তৈরি করেছে সেটা জানি, তার বাড়িতেও গিয়েছি। আসলে এতো অল্প সময়ে কিভাবে তিনি এতো সম্পদের মালিক হয়েছেন এটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, চাকরীচ্যুত করার বিষয়টি আমার জানা আছে। তবে কি কারণে তাদেরকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে তা জানা নেই। সম্প্রতি তাদেরকে ফের চাকরীতে নেওয়া হয়েছে। তবে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর বন্দরে আমার বাড়ি আছে। সেখানে জমির পরিমাণ ৪ শতাংশ। কুমিল্লার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে এবং লোন নিয়ে এই বাড়ি করেছি। বাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত অর্থের হিসেব আমার কাছে আছে।

গাড়ির তেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন চারবার মোহাম্মদপুর আদাবর টু নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করা হয়। এর ফলে প্রতিদিন ৫০ লিটার তেল অথবা ৩০ লিটার গ্যস ব্যবহৃত হয়। এগুলো হিসেব করে দেওয়া হয়। এর বাইরে কিছু নয়। আর আমি যদি কোন রকম অনিয়ম করে থাকি সেক্ষেত্রে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কেউ হয়তো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নানা অভিযোগ তুলতে পারে। তবে এসব অভিযোগের বিপরীতে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না।

এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামান কে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort