নারায়নগঞ্জ হাই স্কুল এখন শিক্ষার্থীদের কাছে টর্চার সেলে পরিনত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে শিক্ষকরা তিনজন শিক্ষার্থীর উপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন। এসব শিক্ষকের মধ্যে রয়েছে সুমন সাহা, নরেন শিকদার এবং এস এম মামুন। এদের মধ্যে এস এম মামুনকে সভাপতি চন্দন শীলের একক সিদ্ধান্তে ৭ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও অন্য দুইজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় সাধারণ শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
৬ষ্ঠ শ্রেনীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নরেন শিকদারের ব্যাচে তার সন্তান কোচিং না করায় সে ক্লাসের মধ্যে ব্যাপক প্রহার করে। এ ব্যাপারে আমি কমিটির সদস্যদের জানানোর পর তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। অপর একজন অভিভাবক জানান, আমার ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। মামুন স্যার তাকে ক্লাসে চড় মারার পর গভর্নিং বডির সদস্য দেলোয়ারা বেগম মায়াকে জানালে তিনি সভাপতির মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষককে ৭ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করান।
এদিকে মহিলা অভিভাবক সাজেদা বেগম অভিযোগ করেন, দশম শ্রেনীর ইংরেজির শিক্ষক সুমন সাহার ব্যাচে আমার মেয়ে না পড়ার কারণে শনিবার দুপুরে তার ১৬ বছরের উপযুক্ত মেয়েকে স্কুলের বারান্দায় শতাধিক ছেলে মেয়ের উপস্থিতিতে চড় থাপ্পর মারে। খবর পেয়ে আমি স্কুলে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে অবহিত করার পর আজকে পর্যন্ত ওই শিক্ষকের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আমি মেয়ের নিরাপত্তার কারনে স্কুলে পাঠানো বন্ধ রাখতে বাধ্য হবো। তিনি বলেন, আমার মেয়ের কোন ক্ষতি হলে তার দায় দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।
এ ব্যাপারে স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য সরকার আলম বলেন, আমি নির্যাতনের ঘটনাগুলো জানার পর সভাপতি রবিবার দুপুরে গভর্নিং বডির সভাপতি চন্দন শীলের সাথে কথা বলেছি। তিনি তাৎক্ষনিক ভাবে দুই শিক্ষককে একমাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত এবং প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বললেও তিনি এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষককে কোন নির্দেশনা না দিয়ে স্কুল থেকে চলে যান। তিনি জনান, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের কিন্তু কিছু উচ্ছৃংখল শিক্ষকের আচরনে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।
গভর্নিং বডির অভিভাবক প্রতিনিধি ওয়াহিদ সাদত বাবু বলেন, সরকারের নিয়ম হচ্ছে কোন শিক্ষার্থীকে প্রহার করা যাবে না। কিন্তু নারায়নগঞ্জ হাই স্কুলে সেটা মানা হচ্ছে না। শিক্ষকরা ব্যাচ পড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে উচ্ছৃংখল আচরন করছে। একজন অভিভাবক হিসেবে আমরা ক্ষুব্দ। আমরা অবশ্যই এর বিচার চাই।
প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হাসান ভুইয়া জানান, আমি বিষয়টি অবহিত হয়েছি। একজন শিক্ষক এস এম মামুনকে ৭দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্যদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
গভর্নিং বডির সভাপতি চন্দন শীল জানান, আমরা বিষয়টি জেনেছি। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, সরকারের আইন অনুযায়ী কোন শিক্ষার্থীকে প্রহার করা যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবো।