নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে উত্তেজনা, সিরিজ বৈঠক ও পরিস্থিতি নিজেদের অনুকুলে আনার চেষ্টা।
বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এর ধাপ গুলি একের পর এক শেষ হওয়ার পর যেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এর ডামাডোলে সারা শহর, পরদিন থেকেই আবার প্রচারনায় নেমে গেছেন অনেক প্রার্থী তাদের নিত্য নতুন এক এক কৌশলে। কেউবা
স্ত্রীকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, কেউবা করছেন ওয়াজ মাহফিল, আবার কেউবা গোপনে ঘর গোছাচ্ছেন, যে যেভাবেই করুক না কেন সবারই উদ্দেশ্য জয়।
সিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৩ নং ওয়ার্ডে ভোটার ও সবচেয়ে বেশি, ৫০ হাজার এর বেশি ভোটারসহ এই ওয়ার্ড যেমন অবস্থানগত ভাবে ২৭ টি ওয়ার্ড এর মধ্যমনি তেমনি এর গুরুত্ব ও রয়েছে অনেক, একমাত্র ওয়ার্ড যেটা ৪ ও ৫ দুটি সংসদীয় আসনের মধ্যে পড়েছে। রয়েছে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, অফিস, ব্যাংক, হাসপাতাল, প্রধান সড়ক, মোটকথা সর্বদিক দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ওয়ার্ড এটি।
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ ওয়ার্ডের সম্ভাব্য চার প্রার্থীর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদ, মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি রবিউল হোসেন, জেলা যুবলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহ ফয়েজউল্লাহ ফয়েজ, তরুন ব্যবসায়ী ইব্রাহিম আদহাম খান।
তবে এ ওয়ার্ডের নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা সমিকরণ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে হয়ত এ চার প্রার্থী ছাড়াও আরোও নতুন মূখ আসতে পারে। তবে কারা করা শেষ পর্যন্ত এ নির্বাচনের মাঠে থাকছেন চুড়ান্ত প্রার্থী যাচাই বাচাইয়ের পর তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে সকলের সামনে।
এরপরই সময়ই বলে দিবে, ১৩ নং ওয়ার্ডবাসীই পুরনোতেই আস্থা রাখবেন নাকি নতুনদের স্বাগত জানাবেন। ভোটাররাই বিচার করবেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ এর মাধ্যমে তারা কাকে নির্বাচন করবেন।
জানাগেছে, বর্তমান কাউন্সিলর খোরশেদ দল মত নির্বিশেষে সবাইকে নাগরিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, ২/১ টি স্বজনপ্রীতির ঘটনা ছাড়া তিনি অনেকটা সফলও হয়েছেন। তারপরও চাউর রয়েছে তার অনেক কাজই লোকদেখানো ও ক্যামেরা সর্বস্ব, তথাপি তার শক্ত প্রতিদ্বন্ধী কোন নির্বাচনেই কেউ দাড়াতে পারেনি যা ভোটের অংকে প্রমানিত।
এবারের নির্বাচনে তিনি দাড়াতে চাইলেও পারবেন কিনা বর্তমান অবস্থায় তা অনেকটাই ক্ষীন সম্ভাবনা। নারী কেলেংকারী তে করোনায় হিরো বনে যাওয়া এ কাউন্সিলর এখন অনেকটাই কাবু।
সম্প্রতি পিবিআই দ্বারা ওই নারীর ধর্ষনের অভিযোগ প্রমানিত করায় তিনি অনেকটাই কোনঠাসা, আবার মসজিদে গতবার ঘোষনা ও দিয়েছিলেন আর নির্বাচন করবেন না, আর দলীয়ভাবে আগে থেকেই খোরশেদ একা তার প্রচারসর্বস্ব আচরণের কারণে। তাই কতটুকু করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দিহান এবার রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
বর্তমান কাউন্সিলর এর সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদন্ধী রবিউল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি যিনি গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী যুবলীগের শাহ ফয়েজউল্লাহ ফয়েজকে এক প্রভাবশালী সাংসদ কর্তৃক বসিয়ে দেওয়ার পরও সফল হতে পারেন নি, অনেক অর্থ খরচ করেও হেরেছেন প্রায় ৪ হাজার ভোট এর ব্যবধানে।
তিনি বর্তমান কাউন্সিলর এর আইনী জটিলতায় রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে তবে সাধারন ভোটারদের নিকট এখনো তিনি একজন ওয়ার্ড নেতার বাইরে নিজেকে প্রমান করতে পারেন নি, আবার সাংসদ তার জন্য আর এক প্রার্থীকে নির্দেশ দিয়ে বসিয়ে দেওয়ার পর ও হেরে যাওয়ায় তার উপর অনেকটাই ক্ষুব্ধ, এবার তাই তিনি অন্য কাউকে বসিয়ে দেবার অবস্থানও নাই।
আবার গতবার ঘোষনা দিয়েছিলেন এটাই তার শেষ নির্বাচন, আবার তার অনুগামীদের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক বিক্রির বিস্তর অভিযোগ, দল ভারী করার জন্য দলের ভেতর বি এন পি জামায়াত ঢুকানোর অভিযোগ ও রয়েছে তাই ৩য় বার এর মত নির্বাচন করে কতটুকু সফল হতে পারবেন তা ও এক প্রশ্ন।
শাহ ফয়েজ উল্লাহ, মেয়াদউত্তীর্ণ যূবলীগের কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক। প্রয়াত তরুন লীগ নেতা মাকসুদ এর শ্যালক হিসাবে বেশি পরিচিত। তিনিও গেল দুইবার চেষ্টা করেও বিজয়ী প্রার্থীর ৩ ভাগ এর এক ভাগ ভোট এ ভাগ বসাতে পারেন নি, আর গতবার চাপ এর মুখে নির্বাচন থেকে সরে দারালেও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি তিনিও তার ৩য় স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে নারী নির্যাতন মামলায় জড়িয়ে ছিলেন অনেকদিন আত্মগোপনে। সম্প্রতি শহরে ফিরে নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানা গেলে ও সাধারন মানুষের মনে তার জন্য জনপ্রিয়তা অনেকটাই অস্তমিত।
ইব্রাহিম আদহাম খান, সবচেয়ে তরুন, একবারেই নতুন এবং কোন রাজনৈতিক দল এর সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও রাজনৈতিক পরিবার এর সন্তান হওয়ায় অনেক কর্মকান্ড ই তার রাজনীতিতে আগমনের আভাস বলে লোকমুখে শোনা যাচ্ছে, দাদা নারায়ণগঞ্জ এর সাবেক এম এল এ আব্দুস সামাদ খান এর সর্বকনিষ্ঠ নাতি হওয়ায়, এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট খালেদ হায়দার খান কাজল এর ছোট ভাই হওয়ায় রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীক সংগঠনের মহলে তার পদচারনা অনেকটা সহজ হয়ে যাওয়ায় খুব ই তাড়াতাড়ি শহরের চেনা মুখ এ পরিণত তিনি।
নিজেও একটি অরাজনৈতিক সংগঠন নারায়ণগঞ্জ ইয়থ ক্লাব এর সভাপতি, করোনা প্রতিরোধে কাজ করেছেন, দেশের হয়ে করেছেন আন্তর্জাতিক মন্ডলে প্রতিনিধিত্ব।
নির্বাচনের ব্যাপারে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে “এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেইনি, তবে আমাকে নিয়ে সবার প্রত্যাশাকে আমি সম্মান জানাই” বললে ও ওয়ার্ড এর অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে তিনি গত দুই বছর ধরে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ওয়ার্ডবাসীর ও সামাজিক পরিমন্ডলের প্রচন্ড চাপে থাকলেও শেষতক পারিবারিক অনুমতি পেলে তবেই মাঠে নামবেন।
নিজের ব্যাক্তিগত একটি ইমেজ থাকায় স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে নির্বাচন করবেন বলে ও অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে নতুন হিসাবে এ তরুন কিভাবে তার কদম ফেলেন তা ভবিষ্যৎই বলে দিবে।