আগামী সোমবার থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্য শাটডাউনের ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন গ্রামের বাড়ি ছুটতে শুরু করেছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার ও শনিবার রাস্তায় ব্যাপক মানুষজনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। রাস্তায় যানবাহন ছিল চোখে লাগার মতো। যেন ঈদ উৎসব। ঈদে ঘরমুখো মানুষ যেভাবে নগরী ছাড়ে তেমন দৃশ্যই দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিঙ্ক রোডের সাইনবোর্ড, সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইল মোড় ও কাঁচপুর চৌররাস্তা। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের আনাগোনাও ছিল বেশি।এমন পরিস্থিতিতে হ-য-ব-র-ল হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জে কঠোর লকডাউন।
শনিবার (২৬ জুন) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইল মোড়ে গিয়ে দেখা যায় উপচে পড়া মানুষের ভীড়। বিভিন্ন মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিক আপ যোগে ছুটছেন মানুষ। লোকাল কিছু বাসও চলতে দেখা গেছে যাত্রী নিয়ে। কুমিল্লার পাদুয়ার বাজারগামী ইয়াকব মিয়া। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি। তার পরিবার গ্রামে থাকে। খবর পাঠিয়েছে সামনে বড় ধরনের লকডাউন হবে। সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে। আপনি চলে আসেন। তাই তিনি বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু এক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন শিমরাইল মোড়ে। সুবিধা করতে পারছেন না। ভাড়া বেশি। কিন্তু তাকে যেতেই হবে। বললেন, যেইভাবেই হোক যামুই। বন্ধের মধ্যে এখানে থেকে কি করবো। ডাল-ভাত যা ঝোটে বাড়িতে গিয়া পরিবারের সাথেই খাই। ইয়াকুবের মতো শত যাত্রী শিমরাইল মোড়ে। এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়েছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও পিকআপ ভ্যান। যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা হাকাচ্ছেন। ফেনীর ছাগল নাইয়াগামী একটি মাইক্রোবাসের চালক কবীর হোসেন (৪৫) বলেন, ভাই আমরা কিছু টাকা পাইলাম। যাত্রীদেরও উপকার হলো। কারণ বাস তো আর চলে না। কিন্তু আমরাও যে একেবারে আরামে আছি তেমন না। গাড়ি ভাড়ার একটি অংশ বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা হিসেবে দিতে হয়। মজার বিষয় হলো শিমরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্স ঘিরে কঠোর লকডাউন উপেক্ষিত হলেও তারা ছিলেন ‘সাক্ষী গোপাল’ এর ভুমিকায়। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, সামাজিক দুরুত্বও মানছে না কেউ। সেদিকে কোন খেয়াল নেই ট্রাফিক পুলিশ বা থানা পুলিশের।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সাইবোর্ড এলাকায় গিয়েও দেখা যায় একই দৃশ্য। নিরাপদ গন্তব্যে ছুটছে মানুষ। রাস্তায় যানবহনের সংখ্যা গত তিন দিন আগের তুলনায় অনেক বেশি। ভুইগড় এলাকার বাসিন্দা জামান মিয়া। পরিবার নিয়ে রওয়না হয়েছেন গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। কিভাবে যাবেন সিদ্ধান্তহীনতায় অনেকটা সময় ধরে দাড়িয়ে আছেন গাড়ির অপেক্ষায়। কয়েকজন যাত্রীকে দৌড়ে একটি পিকআপ ভ্যানে উঠতে দেখা গেলো। ১০/১২ জন যাত্রী নিয়ে দুরুত পিকআপ ভ্যানটি কাঁচপুরের দিকে ছুটতে থাকলো।
মোটকথা শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে কঠোর লকডাউন উপেক্ষিত হওয়ার চিত্র দৃশ্যমান ছিল। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরুত্ব রক্ষায় দায়িত্বশীলদের তৎপরতা তেমন একটা চোখে পড়েনি। ফলে কঠোর লকডাউন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে শাটডাউনের কারণে।