আজ নারায়ণগঞ্জের তিনটি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। জেলা নির্বাচন অফিস ইতিমধ্যে তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা গত কয়েকদিন বিরামহীনভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়েছেন। এখন বাকী ফলাফল। কারা পড়বেন বিজয়ে মালা, এ নিয়ে চলছে আলোচনা।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলার ১৬ ইউপিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৭ জন ও মহিলা ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৩৪ জন। তিনটি ইউনিয়নে মোট ভোট কেন্দ্র ২৭৬ ও ভোট কক্ষ ১ হাজার ৮৪১।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ১৬ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী ৫১ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলার বক্তাবলী, কুতুবপুর ইউপিতে ও রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল, ভুলতা, মুড়াপাড়া ইউপিতে ৫ জন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন-নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলীতে এম শওকত আলী, কুতুবপুরে মনিরুল আলম সেন্টু, রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইলে কামরুল হাসান ভূঁইয়া, ভুলতায় আরিফুল হক ভূঁইয়া ও মুড়াপাড়ায় তোফায়েল আহমেদ আলমাছ। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন না হলেও সাধারণ সদস্য পদে ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচন হবে। তবে ৪টি সাধারণ সদস্য ও ১১টি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদেও একক প্রার্থী থাকায় ওই পদগুলোতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী ৬ হাজার ৫৪৭ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সদস্য পদে প্রার্থী ১ হাজার ১৫৫ জন। এদিকে শেষ সময়ে বুধবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে ইসলামী আন্দোলনের এনায়েতনগর ও কাশীপুরের দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুস সালাম ও মো. ফারুক নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। জেলা ইসলামী আন্দোলনের নেতারা জানান, সাংসদ শামীম ওসমানের অনুরোধে আমরা উন্নয়নের স্বার্থে সরে দাড়িয়েছি।
অন্যদিকে সাধারন মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হলো কারা পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য তাদের নিজ ইউনিয়নে দায়িত্বে আসছেন। তবে নির্বাচনে সহিংসহতাসহ সুষ্ঠভোট হবে কিনা সেই আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
ইতিমধ্যে ভোট কেন্দ্র গুলোতে ব্যালেট পেপার, ব্যালট বাক্স ও ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় ১০ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে ১১ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ওদিকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার লক্ষে নির্বাচনী এলাকায় নামানো হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এছাড়া ও নির্বাচন লঙ্ঘনকারীদের সাজা দিতে মাঠে রয়েছেন নির্বাহী ও বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনে ৩ উপজেলায় ২ জন করে মোট ৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
সুষ্ঠ নির্বাচনের আশা ব্যক্ত করে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, আমরা নির্বাচনে কোন ধরনের সহিংসতা বরদাস্ত করব না। যারা নির্বাচন করতে চান, তাদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যদি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে চান তাহলে গণতন্ত্র ও নির্বাচন কমিশনের সকল নীতিমালা মেনে কাজ করেন। আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে হবে। সুষ্ঠভাবে যেন নির্বাচন হয় এজন্য আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছি।
অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে সামনে রেখে বৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাফেরার ওপর ১৩ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসক। নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলায় বৈধ অস্ত্রধারীরা অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতে পারবেন না। কিন্তু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের কোন প্রকার তৎপরতা চোখে পড়েনি। ফলে শঙ্কা রয়েই গেল।
এদিকে ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, সরকার নিরপেক্ষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা নির্বাচনকে সুষ্ঠু-সুন্দর অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে চাই। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু করতে যা যা প্রয়োজন তাই করব। কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হবে। প্রতি ইউনিয়নে ৩টি করে নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন করা যাবে।