‘নারায়ণগঞ্জ শহরকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়তে চাই’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন আমরা করেছি। রাজধানীর ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জ শহরকে আমরা স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়তে চাই।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের ইসদাইরের শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ইতিহাস এই নারায়ণগঞ্জ ধারণ করে আছে। আন্দোলন-সংগ্রামে সবসময় এই নারায়ণগঞ্জ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। এই নারায়ণগঞ্জ রক্তাক্ত নারায়ণগঞ্জও বটে। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। সেই ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরপরই এই নারায়ণগঞ্জ রক্তাক্ত হয়। ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা চালানো হয়। ২০ জন নেতা-কর্মী সেখানে মারা যায়, এখনও বহু নেতা-কর্মী পঙ্গু হয়ে আছে। বোমা হামলা চালিয়েছিল ওই বিএনপি। নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালের পূর্বে আমাকে আসতে দেয়নি। যে মিলিটারি ডিক্টেটর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ছিল সে আমাকে আসতে দেয়নি। আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করার পর আমি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি ফিরে আসার পর আমার আপনজনকে পাইনি। পেয়েছিলাম বাংলাদেশের জনগণকে। সেদিন বাংলাদেশই আমার পরিবার বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম।
বিগত ১৫ বছরে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন ঘিরে অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয় সেই চক্রান্ত এখনও (চলছে)। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না কাজেই দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। সকলকে অনুরোধ করবো, সকলে শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন। ভোটাধিকার আপনার মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। প্রত্যেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন- বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান।
শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশের এত উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ আর ফিরে তাকাবে না, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে। আমাদের বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র হোক, আমাদের শক্তি এদেশের মানুষ। সেই মানুষকে নিয়েই আমাদের রাজনীতি।
কোভিডের সময় অনেক অর্থশালী ও ধনী দেশ কখনও কাউকে একটা টিকাও দেয়নি, টেস্ট করায়নি। আমি করিয়েছি, বাংলাদেশে আমরা দিয়েছি, বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। আমি বলছি, টাকা-পয়সার দিকে তাকানোর দরকার নাই, যত টাকা লাগবে খরচ করবো, মানুষ বাঁচাতে হবে।
২৮ অক্টোবরে রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কী ভয়ঙ্করভাবে পুলিশের উপর আক্রমন তারা করেছে। পুলিশকে ফেলে পিটিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স জ্বালিয়ে দিয়েছে। ঠিক ২০১৩ সালে তারা যেভাবে হত্যা করেছে, একইভাবে এবারও করেছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতেও তারা আক্রমন করেছে। চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। ওদের মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই।’
নৌকায় ভোট প্রার্থনা করে তিনি বলেন, নৌকা মার্কা আমাদের মার্কা। নৌকা হচ্ছে নূহ নবীর নৌকা, মহাপ্লাবনে যে নৌকা মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকা আজকে উন্নয়ন দিয়েছে, এই নৌকায় আগামী দিনে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এর সভাপতিত্বে জনসমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সাজনুসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।