রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ অপরাহ্ন

নারায়ণগঞ্জে এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে পগারপার দুই চাচা

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪, ৮.৫০ এএম
  • ৪৭ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে এক ভাইয়ের মৃত্যুর পর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও প্রবাসী আয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে অপর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। একদিকে পরিবারের কর্তাব্যক্তি বাবার মৃত্যু এবং চাচাদের স্বার্থপর আচরণে অকূলপাথারে ওই ব্যক্তির দুই শিশুসন্তান ও পরিবার। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে সিআইডির তদন্তের ভিত্তিতে দুই ভাইকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে পাক্কা রোড এলাকার আক্তার হোসেন নিজের প্রবাসী আয়ের অর্থে ২০১১ সালে আক্তার গার্মেন্টস নামে একটি হোশিয়ারি কারখানা (নীট গার্মেন্ট) চালু করেন। তিনি প্রবাসে যাওয়ায় তার আপন দুই ভাইকে সেই ব্যবসা দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে যান। ছোট ভাই খোরশেদ ও বড় ভাই মোশারফ সমভাবে দেওভোগ পাক্কা রোড খানকা গলিতে ১০ টি সেলাই মেশিনের হেসিয়ারী কারখানাটি পরিচালনা করতো। এরপর ব্যবসায় অর্জিত মুনাফা ও প্রবাসী রেমিট্যান্স দিয়ে ধীরে ধীরে সেই ব্যবসা বড় করেন তারা। এক পর্যায়ে করোনা পরবর্তী সময়ে আক্তার প্রবাস থেকে দেশে এসে নিজেও ব্যবসা পরিচালনায় অংশ নেন। কিন্তু নিজের পাওনা চাইতে গেলে ভাইদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। পারিবারিক হিসাব চাইতে গিয়ে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে ও স্ট্রোক করে ২০২২ সালে আক্তারের মৃত্যু হয়।
কারখানার মালিক আক্তারের মৃত্যুর সুযোগে সেই কারখানা ও কারখানার ভেতরে থাকা প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার তৈরি পোশাকসহ মালামাল বিক্রি করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করে ভাই খোরশেদ ও মোশারফ। এক পর্যায়ে মৃত আক্তার হোসেনের স্ত্রী শিউলি বেগম তার প্রাপ্য টাকা চাইলে তাকে নানাভাবে ভয় ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
মৃত আক্তার হোসেনের স্ত্রী শিউলি বেগম অভিযোগ করেন, আক্তার প্রবাসে থাকায় ও তার সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কারখানার কর্মচারীর দায়িত্বে থাকা ছোট ভাই খোরশেদ কৌশলে বিভিন্ন কাগজপত্র তার নামে করে নেয় এবং নানা ভাবে টাকা সরিয়ে নেয়। সেই টাকায় খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ নয়ামাটি হোসিয়ারী মার্কেটে একটি স্থায়ি দোকান, চর কাশীপুর সাড়ে চার শতাংশ জমি, মাদারীপুরে ২২ শতাংশ জমি সহ একাধিক স্থানে সম্পদ গড়েছেন। যার পুরো অর্থই ছিলো একমাত্র আক্তার হোসেনের হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠানের। এমনকি আক্তারের এককভাবে পাঠানো প্রবাসী রেমিটেন্সের টাকায় কেনা বসত বাড়িটিও প্রতারণামূলকভাবে তিন ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয়।
শিউলি বেগম দাবি করেন, আমার স্বামী মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পরিবারের চিন্তা করেছেন। ভাই বোনদের জন্য অকাতরে সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছেন। কখনো ভাইদের সন্দেহ করেননি‌। তাই ব্যাবসা ও অর্জিত সম্পদের কাগজপত্র কার নামে হয়েছে সেটিও জবড়দস্তি করেননি। তিনি সবসময় বলেছেন ভাইয়েরা কখনো বেঈমানি করবে না। পূর্ন বিশ্বাস করেই ব্যবসায়ীক পুরো লেনদেনের দাত্বিয় দেন ছোট ভাই খোরশেদকে। অথচ এই সুযোগে পরিকল্পিতভাবে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে খোরশেদ ও মোশারফ‌।
শিউলি বেগম বলেন, আমার স্বামীর অর্থেই সবকিছু অথচ তাদের স্বার্থপরতায় আজকে আমার সন্তানরাই নিঃস্ব এবং বঞ্চিত।

দেওভোগ পাক্কা রোডের খানকা গলির বাসিন্দা প্রত্যেক্ষদর্শী সেলিম আহমেদ (৬০) বলেন, আমি দেখেছি মৃত আক্তার হোসেন একজন পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন এবং পরিবারের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের জন্য কখনো ভাবেননি, তার ভাইয়েরা দুইটা এতিম বাচ্চাদের প্রতি এমন আচরন করবে কল্পনাও করা যায় না। এতিমদের প্রতি সহানুভূতি না দেখিয়ে তাদের সম্পতি আত্মসাৎ করে বসে আছে। এটা দুঃখজনক।
প্রতিকারের জন্য মৃত আক্তার হোসেনের স্ত্রী শিউলি বেগম নারায়ণগঞ্জ মহানগর আদালতের মামলা করলে আদালত পিবিআই ও সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে গত ২০ মে খোরশেদ ও মোশারফকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন আদালত।
তবে এখনো অভিযুক্তদের এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে দুই আসামি খোরশেদ ও মোশাররফ।
এবিষে নারায়নগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort