এক কেজি খেজুরের দাম কত ? ১৫০ টাকার কমে খেজুর পাওয়া কঠিন। রোজা আসতেই বেড়েছে খেজুরের দাম। তবে নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এক হাজার আটশ টাকা কেজি দরের খেজুর। নগরের সারি সারি দোকানে রয়েছে বাহারী খেজুরের সমাহার।
নগর জুড়ে ১৫ থেকে ২০ ধরনের খেজুর পাওয়া যাচ্ছে। কত জাতের খেজুর আছে? রোজা আসলেই জানা যায় নানা নাম। এই মাসে জনপ্রিয় সব ইফতার উপকরণের মধ্যে এই ফলটির কদর নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি।
ইফতারে আর যাই থাকুক না কেন, খেজুর যেন সবার চাইই চাই। চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে দাম। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ কারণে একেক বাজারে একেক দাম নেয়া হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দাম আদায় করছেন।
বাহারী দামে বাহারী খেজুরের সমাহার এতে ফল ব্যবসায়ীদের দুয়ারে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের। নিদারুণ অসহায় ক্রেতারা এনিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বচসাতেও জড়াচ্ছেন।
দুই নম্বর গেটে খেজুর বিক্রেতা আম্বার (জাম্বু) ব্রান্ডের প্রতি কেজি খেজুরের দাম বিক্রেতা চাইলেন ১ হাজার ৮০০ টাকা। যেখানে এই খেজুরের পাইকারী মূল্য পাঁচ কেজির প্রতি কার্টুন ৭ হাজার টাকা।
খুচরা বাজারে খেজুরের দাম এতো বৃদ্ধির কারণ জানিয়ে খেজুর ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিবছর ভাল ভাল ব্রান্ডের খেজুর আগে অন্তত ৫-৭ বার আমদানি করা যেত কিন্তু এখন তা আসে বছরে ২-৩ বার। আবার দামী বলে এগুলোর কম বিক্রি হয়। আনলেও লাভ হয় কম। সময়মতো বিক্রি না হলে নষ্ট হয়ে যায়।
খেজুরের আমদানি আগের চেয়ে কমে গেছে, এজন্য দাম বাড়ছে। আমাদের ট্রান্সপোর্টের জন্যও গুনতে হচ্ছে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমানে টাকা । তাই সবকিছু মিলিয়ে দামটা একটু বেশি পড়ছে।’
দুই নম্বর গেটে ফলের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের খেজুরের সমাহার। এদের মধ্যে প্রকরণ ভেদে দামের কম বেশি হয়ে থাকে। তবে এদের মধ্যে দুবাই থেকে আসা খেজুর গুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা । খেজুর ব্যবসায়ী মেহেদী জানান তিউনিসিয়া ব্রান্ডের খেজুরের দাম কেজি প্রতি ৪০০ টাকা।
ডেট ক্রাউন ব্রান্ডের খেজুর ৬০০ টাকা , বারারী ব্রান্ডের খেজুর ৫০০ টাকা। এগুলোর পাশাপাশি খুচরা মূল্যে কেজি প্রতি সুকারী ৫০০ টাকা, মাগরুম ৪৫০ টাকা , বড় আজুয়া ৫৫০ টাকা , ছোট আজুয়া ৪০০ টাকা, দাপাস ২৫০ টাকা, করমি মরিয়ম ৪০০ টাকা , মরিয়ম ৫৫০ টাকা, কামরাঙ্গা মরিয়ম ৫০০ টাকা , দুবাই মরিয়ম ৬০০ টাকা, খুরমা ১৬০ টাকা, নূর খেজুর ২৫০ টাকা , বড়ই খেজুর ৩০০ টাকা, আদম খেজুর ৫০০ টাকা , ফিট খেজুর ৪০০ টাকা, ইরাকী খেজুর ১৫০ টাকা।
চাষাড়া জিয়া হলের সামনে ভ্যানে খেজুরের পসরা সাজিয়ে খেজুর বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখানে সব ধরনের খেজুরের দাম কেজি প্রতি ৫০-১০০ টাকা বেশি।
চাষাড়ায় খেজুরের দাম জানিয়ে খেজুর ব্যবসায়ী মিজান বলেন, সুকারী ৫৫০, মাগরুম ৫০০, আম্বার জাম্বু ১৫০০, বড় আজুয়া ৬০০, ছোট আজুয়া ৪৫০, দাপাস ২৫০ করমি মরিয়ম ৪৫০ , মরিয়ম ৬৫০, কামরাঙ্গা মরিয়ম ৭০০, দুবাই মরিয়ম ৮০০, তিউনিসিয়া ৭৫০, নূর খেজুর ২৫০ , বড়ই খেজুর ২৫০ টাকা।
চাষাড়ার চেয়ে কালিবাজার মার্কেট সংলগ্ন বাজারে অনেকটা কম দামেই খেজুর বিক্রি হচ্ছে । এখানের খেজুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খেজুরের দাম কেজি প্রতি দাপাস ২৫০ টাকা, করমি মরিয়ম ৪০০ টাকা , মরিয়ম ৬০০ টাকা , কামরাঙ্গা মরিয়ম ৬০০ টাকা , দুবাই মরিয়ম ৬০০ টাকা , তিউনিসিয়া ৬৫০ টাকা , নূর খেজুর ২৫০ টাকা , বড়ই খেজুর ২৫০ টাকা , সুকারী ৫০০ টাকা , মাগরুম ৪৫০ টাকা, বড় আজুয়া ৭০০, ছোট আজুয়া ৫০০ টাকা, ইরাকী খেজুর ১৫০ টাকা।
এদিকে পাইকারী বাজার চারারগোপে পাঁচ কেজির প্রতি কার্টুনের দাম সুকারী খেজুর ২ হাজার ২৫০ টাকা, মাগরুম ৩ হাজার ১০০ টাকা , বড় আজুয়া ২ হাজার ৪০০ টাকা , ছোট আজুয়া ১ হাজার ৬০০ টাকা, করমি মরিয়ম ১ হাজার ৬০০ টাকা , মরিয়ম ২ হাজার ৮০০ টাকা, কামরাঙ্গা মরিয়ম ৩ হাজার ১০০ টাকা, দুবাই মরিয়ম ২ হাজার ৬০০ টাকা, লুলু খেজুর ১ হাজার ৯০০ টাকা , নূর খেজুর ১ হাজার ৪০০ টাকা , আদম খেজুর ১ হাজার ৭০০ টাকা, ছোট আম্বার ৪ হাজার ৪০০ টাকা, ইরাকী খেজুর দশ কেজির কার্টুন ৭৫০ টাকা, দাপাস ২ হাজার ২০০ টাকা।
তবে খুচরা বাজারে দোকানে দোকানে খেজুরের মূল্যের অধিক পার্থক্য নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা যায়। রমজান উপলক্ষে প্রায় দ্বিগুণ দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
পাইকপাড়ার বাসিন্ধা আসাদুল ইসলাম বলেন, খেজুর স্বাস্থ্যকর এজন্য আমি নিয়মিত খেজুর খাই। প্রতি মাসেই খেজুর কেনা হয়। কিন্তু রমজান উপলক্ষে এখানকার দোকানদারেরা বরাবরই দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারের দাম আরও বেশি হয়ে গেছে। ভালো ব্রান্ডের খেজুর কেনা সাধারণ মানুষদের সাধ্যের বাইরে।
নাসির উদ্দিন টানবাজার এলাকার বাসিন্দা । তিনি কালিবাজার এসেছিলেন রমজান মাসের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কিনতে । খেজুরের দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘খেজুরের দাম গত বারের চেয়ে অনেকাংশে বেড়েছে তাই আমাদেরকে পরিমাণে কম কিনতে হচ্ছে।’
অপর একজন ক্রেতা মহসিন আলী মিশন পাড়ার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এই বছর খেজুরের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। চাহিদা বাড়লেই ওরা সব জিনিসের দাম বাড়ায় ফেলে। এখন খেজুরের চাহিদা বেশি। এজন্য খেজুরের দাম বাড়ায় দিছে।
খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে কিনা- তা জানতে চাইলে চাষাড়ার খেজুর ব্যবসায়ী রবিউল বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় খেজুরের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে, তাই এবার আমাদের ক্রেতা গত বারের চেয়ে কম।’
চারারগোপের খেজুর ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের খেজুরগুলো সৌদি আরব, দুবাই এবং পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয় সবচেয়ে বেশি। অন্যান্যবারের তুলনায় আমরা খেজুর বেশি দামে আমদানি করছি। এজন্য বাধ্য হয়ে বিক্রির মূল্যও বাড়ছে।