তীব্র যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরে। মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৪০-৪৫ মিনিট। শহরের একাধিক স্পটের যানজট ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। এতে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ফলে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্ভোগ চলে আসলেও তা নিরসনে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। বরং ‘উদোর পিন্ডি বুদোড় ঘাড়ে’ চাপানোর মতো নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী মন্তব্য করছেন, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে শহরে অযথা যানজট তৈরী করা হচ্ছে। তবে নগরবাসী এই যানজটের জন্য ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন।
এদিকে দীর্ঘ যানজটে পড়ে যাত্রীরা যেমন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে তেমনি যানবাহন চালকরাও। পথচারী ও যাত্রীদের অভিযোগ, সড়কে উপর যত্রতত্র পার্কিং, অবৈধ যানবাহনের ছাড়াছড়ি, সড়কের পাশে বিভিন্ন মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থা না রাখা, অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ড যানজটের অন্যতম কারণ। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলেও ট্রাফিক বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চিকিৎসা করাতে এসেছেন স্কুল শিক্ষক নাসিমা আক্তার। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্ধা। তিনি বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে চাষাড়ায় আসতে একাধিকবার যানজটের সম্মুখীন হয়েছি। সবচেয়ে বেশি সময় যানজটে ছিলাম নবীগঞ্জ ফেরিঘাটের সামনে। এখানে সবসময় যানজট লেগেই থাকে।
শিবুমার্কেটের বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান বলেন, আগে ইজিবাইকগুলো সাইনবোর্ড থেকে জেলাপরিষদ পর্যন্ত চলত কিন্তু এখন এগুলো চাষাড়া পর্যন্ত আসে। এগুলো রাইফেল ক্লাবের সামনে দিয়ে যখন ঘুরে তখনই লিংকরোডে যানজট তৈরী হয়। এই কারণে চাষাড়ার চৌরাস্তাতেও যানবাহনের জটলা হয়।
শহরের বিভিন্ন স্থান সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সড়ক, নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক, সবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়ক, শায়েস্তা খান সড়ক সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দিনের একাধিক সময়ে অত্যাধিক যানজট সৃষ্টি হয়। জেলার অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ অফিসের মানুষসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের আনাগোনায় শহরে অত্যাধিক ভীড় থাকে। মানুষের সাথে সাথে বেড়েছে যানবাহন। এছাড়াও শহরে অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে সড়কের মাঝেই গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। সড়কে সরু হয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট। ফুটপাত দখল থাকায় চলাচলের জন্য মানুষ বেছে নিয়েছে ব্যস্ততম সড়ক। এর ফলেও বাড়ছে যানজট।
এদিকে নিষেধ থাকার পরেও দিনের বেলা নিতাইগঞ্জ স্ট্যান্ডের যানবাহন মাল বোঝাই শহরে চলাচল করায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন নিতাইগঞ্জ নিবাসী। ভুক্তভোগী আসিফ বলেন, এই এলাকার রাস্তায় দিনেই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড করে পণ্য লোড-আনলোড করা হয়। সারাদিনই এসব যানবাহন চলে বিধায় এখানের সড়কে নিয়মিত যানজট লেগেই থাকে।
অপর একজন ভুক্তভোগী রিয়াদ বলেন, মন্ডলপাড়া ব্রিজের কার্যক্রমের গতি খুবই কম। সড়ক কেটে ফেলায় সরু সড়কের কারণে যানজট বাড়ছে। ছোট এইটুকু জায়গার জন্য পনেরো-বিশ মিনিট লাগে এই রাস্তা পাড় হতে। এদিকে যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রধান বাসস্টান্ড সহ চারটি স্ট্যান্ড বৈধ। বৈধ স্টান্ড গুলোর মধ্যে রয়েছে মন্ডলপাড়া স্ট্যান্ড, মেট্রো স্ট্যান্ড, ১নং রেলগেট বেবি স্ট্যান্ড। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল আলম বলেন, শহরে অবৈধ স্ট্যন্ডের কারণে অতিরিক্ত যানজটের সম্মুখীন হচ্ছে নগরবাসী।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) কামরুল বেগ এ বিষয়ে বলেন, যানজট নিরসনে আমাদের কাজ অব্যহত রয়েছে। করোনার প্রকোপ হ্রাসের ফলে স্বাভাবিক কারণেই যানজট বেড়েছে। আমাদের অভিযান চলছে যেন দ্রুত যানজট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারি। করোনার কারণে অটোরিকশার উপর চাপ ছিল। এজন্য এখন এগুলো আটকানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন প্রচার সহ মাইকিং করছি, আশা করি শীঘ্রই যানজট হ্রাস পাবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহউদ্দিন আহমেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
শহরের যানজট প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, শহরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় লোক সমাগম বাড়ছে। লোক সমাগম হওয়ায় যানজটও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরু রাস্তায় অধিক যানবাহনের ফলে যানজট বাড়ছে।
শহরমুখী ইজিবাইকের পরিমাণ অত্যাধিক, এসব বাহন আটকানো কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে যানবাহন সংক্রান্ত কোন নিয়ম মানা না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন ট্রাফিক পুলিশ।