রুদ্রবার্তা২৪.নেট: করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও থেমে নেই যত্রতত্র মেডিকেল বর্জ্য ফেলার প্রবনতা। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বঙ্গবন্ধু সড়কে অস্থায়ী ডাম্পিং স্পটের বর্জ্য নিয়মিত অপসারণ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। তবে এরমধ্যে নিতাইগঞ্জের ডাম্পিং পয়েন্টে গৃহস্থালি বর্জ্যরে সাথে ফেলা হয় মেডিকেল বর্জ্য। সুরক্ষা সামগ্রী বা কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট বর্জ্যের পাশাপাশি মেডিকেল বর্জ্য ফেলায় বিভিন্ন রোগের সংক্রামণের আশঙ্কা বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের বিপরীত দিকে সম্রাট এন্ড কোং এর (প্রাঃ) লিমিটেড। সম্রাট এন্ড কোং এর (প্রাঃ) লিঃ গার্মেন্টেসের সামনে শহরের একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকের বর্জ্য ফেলা হয়। একই সাথে ওই এলাকার প্রায় সকল বাড়ির গৃহস্থালি বর্জ্যরে সঙ্গে মাস্ক ও গ্লাভসও ফেলা হচ্ছে। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এমন উদাসীনতার চিত্র ভাবিয়ে তুলেছে নগরবাসীকে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকে সম্ভাব্য করোনা রোগীদের রোগ পরীক্ষা –নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী এসব বর্জ্য অটোক্ল্যাভ যন্ত্রে জীবাণুমুক্ত করে তারপর সুরক্ষা ব্যাগে (বায়োসেফটি ব্যাগ) ভরে অপসারন করার কথা। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।
সরেজমিনে ৪ জুলাই ও রোববার (১১ জুলাই) বিকালে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতের পাশে ময়লার ভাগাড়। রাস্তায় গৃহস্থালি বর্জ্যরে পাশাপাশি পড়ে আছে মেডিকেল বর্জ্য। সংক্রামক বর্জ্য ব্যান্ডেজ, তুলা, স্পঞ্জ, রক্ত, পুঁজ, দেহরস দ্বারা সংক্রমিত গজ, রক্ত সঞ্চালনের ব্যাগ-টিউব, রক্ত দ্বারা সংক্রমিত স্যালাইন সেট, সংক্রমিত সিরিঞ্জসহ মাস্ক ও গ্লাভসসহ একাধিক সুরক্ষা সামগ্রী পড়ে আছে। চারিদিকে মাছির ভনভন, ছড়াচ্ছে দূর্গন্ধ। দিনের বিভিন্ন সময়ে এখানে বর্জ্য ফেলা হয় বিধায় সারাদিনই সড়কের ফুটপাতের পাশে বর্জ্য পড়ে থাকে। পরদিন সকালে সেখানের বর্জ্য সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহকারীরা। এসকল বর্জ্য সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মচারীদের জন্যও ক্ষতিকর বলে মনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকারী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন হিরন। একই সাথে মেডিকেল বর্জ্যরে সাথে সম্পৃক্ত কীটপ্রতঙ্গ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
নিতাইগঞ্জের বাসিন্ধা সেচ্ছাসেবক ফারহানা ইসলাম বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমরা প্রতিদিন চলাচল করি। রাস্তার পাশে গৃহস্থালি বর্জ্যরে পাশাপাশি হাসপাতালের ও ক্লিনিকের বর্জ্যও ফেলা হয়। গৃহস্থালি ময়লা থেকেও এই ময়লা বেশি ক্ষতিকর। করোনার এই পরিস্থিতিতে মেডিকেল বর্জ্য এখানে ফেলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। মেডিকেল বিভাগের মানুষ এই বিষয়ে সাধারন মানুষের চেয়ে ভালো বুঝে। তাদের কাছে এই কাজটি আশা করা যায় না।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোররেশন বেসরকারি এনজিও সংস্থা প্রিজম বাংলাদেশে ফাউন্ডেশনের সাথে সিটি করপোররেশনের ভিতরের সকল মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এই চুক্তিতে বেসরকারি মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের বর্জ্য প্রিজমের সাথে যুক্ত হয়েছে। তবুও হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্যও এখানে মাঝেমধ্যে ফেলা হয় বলে জানান এলাকাবাসী। তবে হাসপাতালের নিকটবর্তী ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকেই এখানে মেডিকেল বর্জ্য ফেলে যায় বলে জানান সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ সড়কে মেডিকেল বর্জ্য ফেলে রাখার বিষয়ে বলেন, সিটি করপোরেশনের আশে পাশে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে এবং এখানের বর্জ্য অপসারনের দায়িত্ব যেহেতু সিটি করপোরেশনের। তাই তাদের এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো উচিত। মেডিকেল বর্জ্য সড়কে ফেললে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ। এ বিষয়ে শীগ্রই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন হিরণ এ বিষয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কে গৃহস্থালি যে বর্জ্য ফেলা হয়, সেটা প্রতিদিন সকালেই সংগ্রহ করে নির্ধারিত স্থানে ফেলে অপসারন করা হয়। কিন্তু নিতাইগঞ্জের এ স্থানে সারাদিনই বর্জ্য ফেলে এলাকাবাসী। দিনে একবার বর্জ্য অপসারণ করা হলেও দিনব্যাপী বর্জ্য পড়ে থাকে। আর মেডিকেল বর্জ্য অপসারনে প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সাথে সিটি করপোরেশনের চুক্তি হয়েছে। সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিকেল বর্জ্য প্রিজম বাংলাদেশ সংগ্রহ করে। বর্জ্য ফেলার জন্য ডাস্টবিনও আছে। কিন্তু ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের কাছাকাছি কিছু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, এরা লোকচক্ষুর আড়ালে সড়কে মেডিকেল বর্জ্য ফেলে বলে জেনেছি। শীগ্রই এসব মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।