পদ্মা সেতু হইছে সবাই খুশি, আমিও খুশি। নারায়ণগঞ্জে লিংকরোড প্রশস্ত হবে আমি খুশি, মেডিকেল কলেজ বা ইউনিভার্সিটি হবে, আমি খুশি। অনেকে এদিক ওদিক নিয়ে যেতে চেয়েছে, পারে নাই, পারবেও না। কারণ ওইটা লিংকরোডের পাশেই হবে ইনশাআল্লাহ। যাই হোক, আমি চাই আসলে আমাদের এখানেই হোক ও লিংকরোডেই হোক।
মেডিকেল কলেজ বা ইউনিভার্সিটির অবস্থান নিয়ে বুধবার (২৭ জুলাই) বিকালে জেলা কমিউনিটি পুলিশং ফোরামের পরিচিতি সভা এ কথা বলেন একেএম শামীম ওসমান।
তাঁর ভাষ্য মতে, বর্তমানে সারাবিশ্বে সমস্যা চলছে। সুইজারলেন্ড, জার্মার, ফ্রান্স ও ইতালির মতো দেশ থর থর করে কাপছে। বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের একটা দেশ। আমরা কিভাবে এড়িয়ে যাবো? আমার মনে হয় এই সময়টা হচ্ছে, সবাই মিলে হাতে হাত মিলিয়ে এই দেশটাকে বাচাঁনোর।
নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি ভবনে জেলা কমিউনিটি পুলিশং ফোরামের পরিচিতি সভার আয়োজন প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্টস এসোসিয়েশন ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের জেনারেল সেক্রেটারী তানভীর আহম্মেদ টিটু।
এর আগে কোরআন তেলওয়াত ও গীতাপাঠের মধ্য দিয়ে জেলা কমিটিউনিটি পুলিশিং ফোরামের পরিচিতি সভা শুরু হয়। এরপর পরিচয় পর্ব ও ফুল দিয়ে বরণ করা হয় কমিটির নতুন সদস্যদের।
তিনি আরও বলেন, মানুষ উন্নয়ণ চায়, মানুষ ভালো জিনিস চায়। সবচেয়ে বেশী মানুষ যেটা চায়, সেটা হলো শান্তি। আমার দরজাটা খুলে শুনতে পাবো; কিন্তু কেউ কিছু বলবে না। আমি জমি করবো, আমি বাড়ি করবো। অপছন্দ থাকা স্বর্থেও কারো কাছ থেকে সিমেন্ট বালি কিনতে বাধ্য হতে না হয়। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বুঝি না। আমরা হয়তো ভালো দেশ গড়তে পারবো না। কিন্তু ভালো নারায়ণগঞ্জ গড়তে পারবো ইনশাআল্লাহ। কি চাই আমরা? মৃত্যুর পর যাতে মানুষ আমাদের জন্য একটা হাত তুলে, আমাদের জন্য একটু কাঁদে। যে, আল্লাহ তুমি ওরে মাফ করে দিও।
শামীম ওসমান আরও বলেন, এখন দেখি, যে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে সেও মাদক বিক্রি করে। যে জমি নিয়ে কথা বলে, সে অন্যর জমি দখল করে। এই বিষয়গুলি আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, এই দেশের জনগণ রাষ্ট্রের মালিক, আমরা মালিক না। আমরা কেউ কর্মচারি, কেউ আসছি সেবক হয়ে। আমিও বেতন পাই, প্রধানমন্ত্রীও বেতন পায়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম কমিটি সর্ম্পকে বলেন, কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক খুবই দক্ষ, জনপ্রিয়, উদ্যোগী ও অত্যান্ত পরিশ্রমী; আমার কাছে মনে হয়েছে। আপনাদের করতালী ও উপস্থিতি তারই প্রমান। আমার মনে হয়, এই কমিটিকে যদি ভালো ভাবে কাজ করানো যায়। তাহলে ২ থেকে ৩ হাজার সদস্য অন্তভূক্ত করা কোন ব্যাপারই হবে না। সকলে যদি কাজ করে, তাহলে নারায়ণগঞ্জে নারী উত্তক্ত, বাল্যবিবাহ, মাদক মনে হয় না থাকবে। এতোমধ্যেই এলাকা ভিত্তিক বিট পুলিশিং সেবা চালু হয়েছে। সেই বিটে কোন সমস্যায় পরলে কমিউনিটি পুলিশকে জানাবে। কমিউনিটি পুলিশ সেটা সমাধান করবে। এতে পুলিশের সেবা জনগণের দরজায় পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং পুলিশের সেবাকে জনগণের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্টস এসোসিয়েশন ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা বলেছেন, কমিউনিটি পুলিশিং যখন নারায়ণগঞ্জে প্রথম গঠিত হয় তখন আমরা সদস্য হিসেবে অনেক কাজ করেছি। আমি পুলিশ সুপার মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই যে উনি দল, মত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে এই কমিটি তৈরি করেছেন। আমরা যদি সামাজিক ভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করি, তাহলে আমাদের সমাজ থেকে অনিয়ম অবিচার দুর হবে। আমাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমরা সে দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। আসুন আমরা এক হয়ে নারায়ণগঞ্জের জন্য কিছু করি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমা ওসমান লিপি বলেছেন, আমরা সবাই যদি একে অপরকে সহায়তা করি তাহলে আলাদা ভাবে সমাজ প্রতিষ্ঠিত করার কোন প্রয়োজন হবে না। আজকে তুমি ভালো হয়ে গেলে কাল তুমি কোন অপরাধ করবে না। অনেক কমিটি তৈরি হলেও তেমন কিছু করতে পারে না, তবে কিছু কিছু কমিটি তাদের কাজের স্বাক্ষর রেখে যায়। তারাই সফল হয় যারা স্বার্থ ছাড়া মানুষের উপকার করে, তাদের পাশে দাঁড়ায়। আমি এই কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে আছি। যখনই আমার প্রয়োজন হবে আমি প্রতিজ্ঞা বদ্ধ, আমি থাকবো পাশে। ‘সার্ভ দ্যা পিপল, সার্ভ দ্যা হিউমিনিটি’ সেই কাজে নিয়োজিত থাকতে চাই। যাতে আল্লাহ আমাকে হাশরের ময়দানে ক্ষমা করেন। মানুষের বিনয় মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করে, এবার যে যেই পোষ্ট এ থাকুক না কেন। নারায়ণগঞ্জে প্রশাসনের সাথে যুক্ত সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মিডিয়া সেল এর চেয়ারম্যান ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সেক্রেটারি তানভীর আহমেদ টিটু বলেছেন, এই কমিউনিটি পুলিশিং এর বিষয়ে বা এই সংগঠনের কাজ কি সেটা অনেকে হয়তো জানে না। আমরা যদি এই কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকে সহযোগীতা করি তাহলে আমাদের সমাজ থেকে সন্ত্রাস, মাদকসহ যত ধরণের অপকর্ম আছে সেগুলো দূর করা সম্ভব। আমরা একেকজন একেক দায়িত্ব নিয়ে বড় হই এবং সেই সকল দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হয়। এর বাইরেও সমাজের জন্য আমাদের কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই কমিউনিটি পুলিশিং হচ্ছে সমাজের সাথে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সেতু বন্ধনের একটা যায়গা। আমাদের এলাকার আশেপাশে সংগঠিত হওয়া অপরাধ সম্পর্কে যদি আমরা পুলিশকে অবগত করি তাহলে অপরাধ দমনটা কিন্তু অনেকটা সহজ হয়ে যায়। শুধু অপরাধ দমনই নয়, কোন পরিবার বা ব্যক্তির যদি কোন সাহায্য সহযোগীতার সুযোগও আমাদের আছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল হাই, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমা ওসমান লিপি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট চন্দন শীল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোসা. ইসমত আরা, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাওসার আহাম্মেদ পলাশ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ্ নিজাম, নারায়ণগঞ্জ বার এসোসিয়েশনের সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল, নারায়ণগঞ্জ বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট এড. মুহাম্মদ মহসীন মিয়া, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের অফিস সেক্রেটারী ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘লাইভ নারায়ণগঞ্জ’র সিইও মোহাম্মদ কামাল হোসেন প্রমুখ।