নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো সন্ত্রাসী রাজীব ওরফে শিনা রাজীবকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর এই সন্ত্রাসীকে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।
আসামী পক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করলে আদালত তা না মঞ্জুর করে রাজীবকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত। ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নুর ইসলাম ওরফে কালা মিয়া ও তার পরিবারের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টায় নগরীর দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকা থেকে শিনা রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে, তার গ্রেফতারের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, আওয়ামীলীগ আমলে এলাকাবাসীর উপর চরম জুলুম-নির্যাতন করে রাজীব ও রাসেল। বর্তমানে বিএনপির কতিপয় পাতি নেতাদের শেল্টারে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠে তারা। জানা গেছে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীণ সময়ে রাজীব ও তেল চোর রাসেলসহ তার ভাই ও স্বজনরা বেপরোয়া জীবন যাপন করতো। আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতাদের নাম বিক্রি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখতো। এমনকি, কোনো অনুমতি ছাড়াই আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে অকটেন-পেট্রোল বিক্রি করতো।
তবে, আওয়মীলীগের বড় বড় নেতারা পালিয়ে গেলেও নানা অপকর্ম করেও বীরদর্পে এলাকায় থেকে বিএনপির পাতি নেতাদের সাথে মিশে আবারও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাজীব ও রাসেল বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ আগস্ট দেওভোগ পাক্কারোড এলাকায় ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নুরু ইসলাম ওরফে কালা মিয়া ও তার পরিবারের উপর হামলা চালিয় তেল চোর রাসেল, রাজীব ও তাদের বাহিনী। এ ঘটনায় বৃদ্ধ নুর ইসলাম (৭০) বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে।
এ মামলায় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শিনা রাজীবকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গেছে। মামলার অন্য আসামীরা হলেন, তেল চোর রাসেল, তার বাবা আশরাফ উদ্দিন ওরফে সুদি বাউক্কা আশরাফ, ভাই জহিরুল ইসলাম শান্ত ওরফেম মাইগ্গা শান্ত, মোরশালিন শুভ ওরফে নাইনাল শুভ, মো. মাসুদ ওরফে কামলা মাসুদ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান কাইউম।
এদিকে, রাসেল ওরফে তেল চোর রাসেল ও রাজীব সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া দেওভোগ শেখ রাসেল পার্ক এলাকার গার্মেন্টস কর্মী রাসেল ওরফে তেল রাসেল ও তার পরিবার দলবদল করে এখন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত হতে চায়। স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনামলে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের চাটুকারিতা করে যেভাবে নানা অপকর্ম করেছে, এখনও সেভাবেই বিএনপির কতিপয় নেতার চাটুকারিতা করে সেই সকল অপকর্ম বজায় রাখতে মরিয়া রাসেল ও তার পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয়রা বলছে, কুখ্যাত এই আওয়ামীলীগার রাসেল ওরফে তেল রাসেল, তার ভাই রাজীবসহ পুরো পরিবার সারাজীবন আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে মানুষের সাথে নানা অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন করেছে। এ ধরনের ব্যক্তি যদি বর্তমানে বিএনপি নেতাদের সাথে মিশে আবারও সেই অপকর্ম শুরু করে, তাহলে ছাত্র-জনতার যে অর্জন, গণঅভ্যুত্থানের ফলে বিএনপির যে অর্জন তা ম্লান হতে পারে। তাই, বিএনপি নেতাকর্মীদের উচিত এ ধরনের পল্টিবাজদের কোনো আশ্রয় প্রশ্রয় না দেয়া। স্থানীয়রা জানায়, ২০০৮ সালের আগেও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো এই রাসেল ও রাজীব। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর পাল্টে যায় রাসেলের ভাগ্য। এসময় ছিনতাই, মদ-বিয়ার, গাজা-হেরোইন ও অন্যান্য মাদক ব্যবসা, ভুমিদস্যুতাসহ নানা অপকর্ম করে গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে হন কোটিপতি। কুখ্যাত সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমান, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, আড়াইহাজারের সদ্য সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুসহ একাধিক নেতার পা চেটে দেওভোগ এলাকায় কায়েম করে সন্ত্রাসের রাজত্ব।