শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনে সিরিয়ার কী ভূমিকা আছে

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪.১৬ এএম
  • ৪৬৮ বার পড়া হয়েছে

২০১৬ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত তুরস্ক উত্তর সিরিয়াতে চারটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে। প্রত্যেকটি তুর্কি সামরিক অভিযানেরই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। সিরিয়ার পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এসব অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

 

সিরিয়াতে তুরস্কের বিভিন্ন অভিযানের প্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায় যে এসব অভিযান দেশটির শাসক গোষ্ঠীকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে। তুরস্কের সিরিয়া নীতি দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও তার দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) ক্ষমতাকে সংহত করেছে। এছাড়া তুরস্কের দেশীয় রাজনীতির গতিকে পরিবর্তন করেছে।

তুরস্কের দেশীয় রাজনীতিতে দেখা গেছে দেশটির শাসক গোষ্ঠী সিরিয়া সঙ্কটকে ব্যবহার করে কুর্দিদের চাপে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৭ সালের সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পার্লামেন্টে কুর্দিদের আসন সংখ্যা কমিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। সিরিয়া অভিযানের মাধ্যমে এরদোগান স্বদেশীয় জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করেন এবং নির্বাচনে জয় পান। একইসাথে ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর সামরিক বাহিনীর গ্রহণযোগ্যতাও ফিরে আসে এ সিরিয়া অভিযানের পর।

তুরস্কের সিরিয়া অভিযানে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিরও ব্যাপক পরিবর্ত হয়। সিরিয়ার কুর্দিদের নিয়ে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সিরিয়ার কুর্দিদের বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল করে দেয় তুরস্কের বিভিন্ন সামরিক অভিযান। মার্কিন নীতি নির্ধারকরা কুর্দিদের সমর্থন করলেও তুর্কিদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এরপর রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনে তুর্কিরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরো তিক্ত করে তুলে। কিন্তু এ বিষয়টিও তুরস্কের সিরিয়া নীতির কারণে হয়েছে। সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্ক ও রাশিয়ার কৌশলগত সুসম্পর্ক দু’দেশের উদ্দেশ্যকেই সফল করেছে। এর মাধ্যমে সিরিয়াতে আসাদ সরকারও টিকে গেছে আর দেশটিতে কুর্দিদের শক্তি চূর্ণ করা হয়েছে। কুর্দিদের দুর্বল ও শক্তিহীন করাই ছিল তুরস্কের মূলনীতি।

এছাড়া সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্কের সম্পৃক্ততার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকেও ছাড় পেয়েছে তুর্কি কর্তৃপক্ষ। কারণ, সিরিয়া যুদ্ধের কারণে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী তুরস্কে অবস্থান করছে। সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হলে এ শরণার্থী ইস্যুকে ব্যাপক গুরুত্ব দিতে থাকে তুর্কি সরকার। এ সিরিয়ান শরণার্থী ইস্যুকে কেন্দ্র করেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সিরিয়া থেকে সামগ্রিক সুবিধা পাচ্ছে তুরস্ক।

মোটকথা, সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্কের সম্পৃক্ততা দেশটিকে শুধু সঙ্ঘাতের মধ্যেই জড়ায়নি, আঞ্চলিক ও ঐতিহ্যবাহী মিত্র দেশেগুলোর সাথে সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মাধ্যমে তুরস্ক আরো আগ্রাসী ও জাতীয়তাবাদী পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছে।

সিরিয়াতে তুরস্কের কৌশলী অবস্থান দেশটির ভাবমূর্তি বাড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ভূমিকা বাড়িয়েছে। সিরিয়াতে বিভিন্ন সামরিক অভিযান চালানোর মাধ্যম তুরস্কের গুরুত্ব বেড়েছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে তুরস্ক একটি সুবিধাজনক অবস্থানে চলে এসেছে।

সিরিয়া অভিযানে তুরস্ক বিভিন্ন সমরাস্ত্র ব্যবহার করেছে, সামরিক ও বেসামরিক নীতিতে বিভিন্ন ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে। সিরিয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করেই তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালের তুর্কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও সিরিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort