সংক্রমণ ও বিধ্বংসী ক্ষমতায় কোনটি এগিয়ে- করোনার অতি সংক্রামক ধরন হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিতি পাওয়া ডেল্টা নাকি সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া বহু রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয় করোনার রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন। ইতোমধ্যে দেশটিতে এই ধরনে আক্রান্ত ২২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, বতসোয়ানা, ব্রিটেন, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ইসরায়েল, ইতালিসহ ১৪টি দেশে এই ধরনটিতে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ওমিক্রনকে ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
অন্যদিকে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ডেল্টা, যা এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির সবচেয়ে সংক্রামক ধরন হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্বের সব দেশেই ডেল্টায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২০২১ সালে এ পর্যন্ত পৃথিবীর কয়েক লাখ মানুষ মারা গেছেন ডেল্টার প্রভাবে।
ওমিক্রন সম্পর্কে জানতে বিশ্বের বেশ কয়েকজন সংক্রামক রোগ ও জীবাণু বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নিয়েছে রয়টার্স। এই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওমিক্রনের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দেখে এই ধারণা পাওয়া যায় যে, এ ধরনটি মানবদেহে টিকার সুরক্ষাকে বেশ ভালোভাবেই ফাঁকি দিতে সক্ষম।
এ সম্পর্কে তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন বেটা ও গ্যামার যেসব বৈশিষ্ট্য মূল করোনাভাইরাস থেকে ওই ধরনগুলোকে আরও বিধ্বংসী করে তুলেছিল, সেসব বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে ওমিক্রনের মধ্যেও।
তাছাড়া মানুষের করোনা প্রতিরোধী শক্তি বা অ্যান্টিবডিকে আক্রান্ত করতে পারে- এমন ২৬টি বৈশিষ্ট্য ওমিক্রনের মধ্যে আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেগুলোর বেশিরভাগই মূল করোনাভাইরাস ও তার অন্যান্য রূপান্তরিত ধরনগুলোর মধ্যে দেখা যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের উইল কর্নেল মেডিকেল কলেজের অণুজীব ও রোগ প্রতিরোধবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জন মুর এ সম্পর্কে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে সংক্রামক ও প্রাণঘাতী কি না। এই মুহূর্তে এটি খুব, খুব এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানতে হবে।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে, সেসব দেশে এই ধরনটিতে আক্রান্ত রোগীদের হিসাব ডেল্টায় আক্রান্ত রোগীদের থেকে পৃথক রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই বোঝা যাবে কোনটি বেশি সংক্রামক- ডেল্টা না ওমিক্রন।
তাছাড়া সামনের সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে আরও কিছু তথ্য আসবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বেইলর কলেজ অব মেডিসিনের মলিকিউলার ভাইরোলজি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. পিটার হোটেজ রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছি। কেউ বলছেন ওমিক্রনের প্রভাবে যারা অসুস্থ হচ্ছেন, সেই অসুস্থতার উপসর্গগুলো খুবই মৃদু। আবার কেউ বা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার হাসপাতালগুলোতে বেশ কয়েকজন রোগী এই ধরনটির প্রভাবে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন।’
‘প্রকৃত অবস্থা কী- তা জানতে আমাদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। আমার বিশ্বাস, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই আমরা জানতে পারব যে, এই ধরনটির বিধ্বংসী ক্ষমতা কতখানি।’
একই সময়সীমার মধ্যে এটিও জানা যাবে যে, ওমিক্রন টিকার সুরক্ষাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম কি না। এ বিষয়ক প্রাথমিক তথ্যগুলো আসবে টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা লোকজনের রক্তের নমুনা পরীক্ষার ল্যাব থেকে। ল্যাবে রক্তের নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমেই জানা সম্ভব ধরনটির প্রভাবে টিকার সুরক্ষা কমছে নাকি অপরিবর্তিত আছে।
নিউইয়র্কের বিজ্ঞানী জন মুর এ সম্পর্কে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ল্যাবে বর্তমানে এই ধরনের পরীক্ষা হচ্ছে। চূড়ান্ত ফলাফল জানতে আমাদের আপাতত সপ্তাহ দুয়েক অপেক্ষা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’