বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন

ট্রাম্পের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪, ১০.৪৫ এএম
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

নির্বাচনি প্রচারে বিদেশভীতিকে অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জয়ের পর সেই ধারাবাহিকতায় জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ঘোষণা এসেছে তার প্রচার দলের পক্ষ থেকে।

এদিকে এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম দিন থেকে ব্যাপক আকারে অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ট্রাম্পকে বেশকিছু কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। একদিকে আইনি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, অন্যদিকে তাকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সবমিলে সেখানকার নাগরিক অধিকার ও সমাজের ওপর চরম নেতিবাচক অভিঘাত ফেলতে পারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল : ট্রাম্পের প্রচারের বড় অস্ত্র বিদেশভীতি (জেনোফোবিয়া)। প্রচারের প্রথম দিন থেকে তিনি একে বিভক্তির রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন জয়ের পর জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের প্রচারাভিযান সংক্রান্ত দাফতরিক সাইটে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিকত্বপ্রাপ্তির যে আইন বা বিধি এতদিন প্রচলিত ছিল, তা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির নির্বাচনে জয়ী ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেসব ভূমিষ্ঠ শিশুদেরই স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে, যাদের পিতা কিংবা মাতা অর্থাৎ অন্তত একজন অভিভাবকের মার্কিন নাগরিকত্ব বা দেশটিতে বসবাসের বৈধ অনুমোদন রয়েছে।

দাফতরিক ওয়েবে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য ওই শিশুর পিতা কিংবা মাতা, যেকোনো একজনের নাগরিক হওয়া বা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের অনুমোদন থাকা জরুরি। অবিলম্বের দেশের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে এই নির্দেশনা পাঠানো হবে।’

আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জে ডি ভ্যান্স। ওই দিন থেকেই এই নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে সাইটে।

অবৈধ অভিবাসী তাড়ানো : নেটিভদের খুশি করে তাদের ভোট পাওয়ার স্বার্থে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অবৈধদের ঝেটিয়ে বিদায় করবেন। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পরই তার অগ্রাধিকার হবে সীমান্তকে ‘শক্তিশালী ও নিরাপদ’ করা। এদিকে এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই পরিকল্পনার আর্থিক খরচ অনেক হলেও, বাস্তবে আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।’

আইনি জটিলতা : যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সংক্রান্ত আইনজীবীরা বলেছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলে ট্রাম্পের নির্দেশনা মার্কিন সংবিধানবিরোধী এবং যদি ক্ষমতা গ্রহণের পর সত্যিই এই নির্দেশনা কার্যকর হয়, তা হলে সংবিধান লঙ্ঘনের মতো গুরুতর ঘটনা ঘটবে। মার্কিন অভিবাসন আইনজীবী গ্রেগ সিসকাইন্ড সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর সরাসরি লঙ্ঘন। যদি সত্যিই এটি কার্যকরের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা হলে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে।’

এদিকে ট্রাম্প লাখ লাখ মানুষকে ফেরত পাঠাতে চাইলেও বিষয়টি এত সহজে হবে না বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তারা বলেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরকার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করতে চায়, তা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশাল এবং ব্যয়বহুল লজিস্টিকজনিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১০ লাখ মানুষকে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ ও পিউ রিসার্চের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন, যা ২০০৫ সালের পর থেকে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় চার-পঞ্চমাংশ অভিবাসী ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

আইন অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসীদের দেশছাড়া করতে হলে তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, অভিবাসীদেরও আইনি লড়াইয়ের অধিকার রয়েছে, যার মধ্যে আদালতে শুনানি অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ব্যাপক মাত্রায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম চালানো হলে, আগে থেকেই প্রক্রিয়াধীন মামলায় পূর্ণ অভিবাসন আদালতের ওপর চাপ বাড়বে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের (এমপিআই) নীতি বিশ্লেষক ক্যাথলিন বুশ-জোসেফ বলেন, আইস এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা যেকোনো গণ-নির্বাসন কর্মসূচির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উদাহরণ দিয়ে জানান, ফ্লোরিডার ব্রোয়ার্ড এবং পাম বিচ কাউন্টির শেরিফ অফিসের আগস্টের ঘোষণা অনুযায়ী তারা ট্রাম্পের গণনির্বাসন পরিকল্পনায় সাহায্য করবে না। এ রকম অনেকেই এই পরিকল্পনার সঙ্গে একমত নন, যা কার্যক্রম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
যদি মার্কিন প্রশাসন গণনির্বাসনের পরিকল্পনা আইনগতভাবে বাস্তবায়ন করতে চায়, তবে তাদের একাধিক কঠিন বাস্তবিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক খরচ : বিশেষজ্ঞদের মতে, এক মিলিয়ন বা তার বেশি লোককে নির্বাসন করার খরচ কয়েকশ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ২০২৩ সালে আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) পরিবহন ও নির্বাসনের জন্য বাজেট ছিল ৪২০ মিলিয়ন ডলার (৩২৭ মিলিয়ন পাউন্ড)। ওই বছর সংস্থাটি ১ লাখ ৪০ হাজারের কিছু বেশি লোককে প্রত্যাবাসন করেছে। এ ছাড়া, নির্বাসন ফ্লাইটের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়াতে হবে, যার জন্য সামরিক বিমান ব্যবহার করা হতে পারে। এই খরচের মধ্যে সামান্য পরিবর্তনও শত মিলিয়ন ডলার বাড়াতে পারে। ‘একটি ছোট পরিবর্তন আনলেও সেখানে ১০ মিলিয়ন বা শত মিলিয়ন ডলারের খরচ হতে পারে, এবং একটি বড় পরিবর্তন হলে, সেটা শত শত মিলিয়ন ডলারের খরচ হতে পারে’, বলেছেন রাইকলিন-মেলনিক।

এই খরচগুলো আরও বাড়বে যদি ট্রাম্প আরও কিছু সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, যেমন দক্ষিণ সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, ফেন্টানাইল প্রবাহ ঠেকাতে নৌ-অবরোধ এবং সীমান্তে হাজার হাজার সেনা পাঠানো।

লাতিন আমেরিকার ওয়াশিংটন অফিসের অভিবাসন ও সীমান্ত বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম আইজ্যাকসন বলেন, ‘গণনির্বাসনের ভীতিকর দৃশ্যাবলি রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’

অভিবাসনের ইতিহাসবিদ রাকুয়েল মিনিয়ান বিকল্প ধারার সংবাদমাধ্যম ডেমোক্র্যাসি নাউকে বলেন, ১৯৩০ ও পঞ্চাশ দশকে অভিবাসী তাড়ানোর ঘটনা মার্কিন সমাজে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। ট্রাম্প যা করতে চাইছেন, তাতেও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। আমাদের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort