দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। যেখানে তারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ অ্যাখ্যা দিয়েছে। ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক গবেষণায় তারা দেশের ৫০ টি সংসদীয় আসনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। দৈবচয়নের ভিত্তিতে আসন বাছাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে নির্বাচন নিয়ে করা গবেষণার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
গবেষণায় প্রত্যেক আসনে প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ওপর তথ্য সংগ্রহ এবং সরাসরি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে তারা নির্বাচনের দিন বুথ দখল, জাল ভোট দেয়াসহ নানা অনিয়মের তথ্য সংগ্রহের কথা উল্লেখ করেছে। তারা নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধমালা ভঙ্গ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণায় বাঁধা, হামলা হুমকি, নির্বাচনের আগে পরে সহিংসতাসহ বিভিন্ন বিষয়ও বিবেচনায় নিয়েছে বলে জানিয়েছে। আলাদা করে আসন ভিত্তিক নয় ৫০ টি আসনের সম্মিলিত তথ্য গবেষণায় তুলে ধরা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন’ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চারবারের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন হলেও সবসময় আলোচনায় ছিল এই আসনটি। প্রচারণা শুরুর আগেই পাড়া-মহল্লায় নেতা-কর্মীদের মিছিল ও নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তাঁকে শোকজ করেন এই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ কাজী ইয়াসিন হাবীব।
২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফতুল্লার কাঠেরপুল এলাকায় স্থানীয় যুবলীগের কর্মী ইমরানের নেতৃত্বে এই আসনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী সেলিম আহমেদের প্রচারণায় হামলার ঘটনা ঘটে।এতে প্রার্থীসহ ৬ জন আহত হন৷
২৫ ডিসেম্বর বিকাল ৪ টার সময় ফতুল্লা রেল লাইন বটতলা এলাকায় প্রচারণাকালে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তৃনমুল বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট মো. আলী হোসেনের প্রচারণায় বাধা, প্রচার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল এবং মাইক ও অটো রিক্সা ভাংচুর করেন।
নির্বাচনের দিন ৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ফতুল্লার একটি ভোটকেন্দ্রে নৌকায় জাল ভোট দেয়ার অপরাধে শামীম ওসমানের দুই কর্মীকে ২ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন আসনটিতে নির্বাচনকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান বিথী৷
অপরদিকে নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনোত্তর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান অভিযোগ করেন কিছু জায়গায় পুলিশ, কিছু জায়গায় জুডিশিয়াল ডিপার্টমেন্ট, কিছু জায়গায় প্রিসাইডিং অফিসাররা তাঁর ভোট কমাতে চেষ্টা করেছে। এমনকি ভোট স্লো করে দেয়ার হুমকি দিয়ে ফতুল্লার পাইলট স্কুল কেন্দ্রে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু ৩ টাকাও তিনি দেননি বলে জানান।
উল্লেখ্য জেলায় সবচেয়ে কম ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ পড়েছে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত শামীম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। আবার কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফলে একটি কেন্দ্রে সবেচেয়ে কম ভোট পড়েছে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।