আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই শতাধিক শিশু এসব রোগের চিকিৎসা নিচ্ছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এসব শিশুদের বয়স ২১ দিন থেকে তিন বছর। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় শিশু ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দায়ও বিছানা বিছিয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে শিশুদের। হঠাৎ করেই শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ, শিশু ওয়ার্ড ও ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দায় এসব রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ১৯১ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১২০ জন শিশু। সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছে ৯৯ জন। হাসপাতালের ১০০টি শয্যার মধ্যে শিশুদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৪টি শয্যা। ১৪ জনের চিকিৎসা সামগ্রী, চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে চলছে এসব শিশুদের চিকিৎসা। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত গরম ও ঠান্ডায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে।
অর্মিতা বাড়ৈর বয়স মাত্র ২১ দিন। তার মা অঞ্জু বাড়ৈ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দার একটি সিটে থেকে মেয়ের চিকিৎসা নিচ্ছেন। অর্মিতা গত তিন দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত।
অঞ্জু বাড়ৈ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করেই মেয়ে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে দেখি অর্মিতার মতো আরও অনেক শিশু অসুস্থ্য। হাসপাতালে বেড না থাকায় বাইরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছি। নার্স, ডাক্তাররা নিয়মিত দেখাশোনা করছেন।
শরীয়তপুর পৌরসভার ধানুকা এলাকার রেজাউল মাদবরের ছেলে ফাহিমের বয়স তিন মাস। রেজাউল মাদবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঠান্ডা ও কাশি নিয়ে কয়েকদিন ধরে ভুগছে ফাহিম। হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কিন্তু হাসপাতালে কোনো বেড নেই। এখানে অনেক গরম। ঠিকমতো কোথাও দাঁড়ানোও যাচ্ছে না। ফাহিম যন্ত্রণায় সারাক্ষণ কান্না করছে। হাসপাতাল থেকে বাসা কাছে হলেও এখানে নিয়মিত চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ করছেন বলে যাচ্ছি না।
জাজিরা উপজেলার সেনেরচর এলাকার জিন্টু মাদবর সদর হাসপাতালে এসেছেন তার সাড়ে চার মাস বয়সী শিশু সন্তান ইউসুফকে নিয়ে। ইউসুফ গত পাঁচ দিন যাবত জ্বর, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত।
জিন্টু মাদবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলেটা হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে এসেছি চার দিন হলো। এখনো আমার সন্তান সুস্থ হয়নি।
সাবরিনা আক্তারের বয়স এক বছর। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি নিয়ে গত দুই দিন যাবত হাসপাতালে ভর্তি সে। তার বাবা সোবহান শরীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করেই আমার মেয়ে জ্বর, ঠান্ডা, কাশিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর দেখি তার মতো আরও অনেক রোগী। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরে সিট পেয়েছি। এখানে থেকে চিকিৎসা নিতে কষ্টই হচ্ছে।
শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স শাপলা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে কয়েকদিন যাবত জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। অতিরিক্ত রোগী হওয়ার কারণে এসব শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের কষ্ট হলেও ফুটফুটে এসব শিশুদের সেবা মায়ের মমতা দিয়েই করে থাকি আমরা।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই শিশুরা জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসা নিলে শিশুরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্ পরান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত এসব রোগে যেন শিশুরা আক্রান্ত না হয়, সেজন্য মা-বাবার উচিৎ শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, শুকনো পরিবেশে খাবার খাওয়ানো। মলত্যাগ করার পর সুন্দরভাবে পরিষ্কার করা। এসব রোগ প্রতিরোধে পুষ্টিকর ফলমূল খাওয়াতে হবে। সর্বপরি মা-বাবার সচেতন হওয়ার বিকল্প কিছু নেই। যেসব শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে, তারা চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে উঠবে।