দীর্ঘ ১৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুপ্রতীক্ষিত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করলেও প্রকাশ্যে মাঠে দেখা যাচ্ছে না দলীয় নেতা কর্মীদের।
তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি সিলেকশন নয় ইলেকশনের মাধ্যমে তারা চায় তাদের আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে।
দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলর ছাড়াই ‘পকেট কমিটি’ করার ষড়যন্ত্র চলছে এ নিয়ে জেলা বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দলীয় একটি গোপন সূত্রে জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে মূলত দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দলের নেতৃত্ব বদলের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কাউন্সিলকে ঘিরে ভোটারদের নিয়ে গোপন বৈঠক করে আর্থিক লেনদেন করা হচ্ছে।
বেশ কয়েকটি থানা উপজেলায় কাউন্সিলরদের ডেকে গোপন বৈঠক করে গণস্বাক্ষরও নেয়া হচ্ছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া তার অনুসারী নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকনকে নির্বাচিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। রাজিবকে ঠেকাতে চলছে নানা ষড়যন্ত্র।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের গুলো নাকি গোলাম ফারুক খোকনের পক্ষে কাজ করছে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। কারন নির্বাচন হলে খোকন বিপুল সংখ্যক ভোটারের ব্যবধানে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিবের কাছে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আর যাতে নির্বাচন না হয় তার জন্য দিপু ভূঁইয়া কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গোলাম ফারুক খোকনকে সিলেকশনের মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বানানোর জন্য।
তবে তৃণমূলের কর্মীদের দাবি, দীর্ঘ ১৪ বছর পর যে সম্মেলন হতে যাচ্ছে এই সম্মেলন অবশ্যই ভোটাভুটির মাধ্যমে আমরা আমাদের নেতা নির্বাচিত করব। সাধারণ সম্পাদক পদে যে যোগ্য তাকে আমরা মূল্যায়ন করবো।
বিগত দিনে যারা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন কর্মীদের খোঁজখবর নিয়েছেন এবং আগামী দিনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে এমন নেতাকেই আমরা নেতা নির্বাচিত করব। সুতরাং কোন নেতার কথা আমরা নেতা নির্বাচিত করব না।
আর যদি নির্বাচন না করে সিলেকশনের মাধ্যমে কেউ নেতা নির্বাচন করার পায়তারা করে তাহলে আমরা তৃনমুল নেতাকর্মীরা তাদেরকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিব।
আমরা চাই শান্তিপূর্ণ একটি সম্মেলন যে সম্মেলনে আমরা সবাই আমাদের ভোটার প্রয়োগ করতে পারি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দের প্রতি আমরা অনুরোধ জানাবো নারায়ণগঞ্জে যেনো সুন্দর একটি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কাউন্সিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
আর সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রনেতা মাশুকুল ইসলাম রাজিব ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন।
জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাউন্সিলে স্বশরীরে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
সম্মেলনের ভোট গ্রহনের তারিখ ১৭ জুন সকাল ১০টা হইতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ইতোমধ্যে ১ হাজার ১০ জনের চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এড. সামসুল আরিফীন।
প্রায় ১৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ কাউন্সিল। তাই কাউন্সিলকে ঘিরে রয়েছে ব্যাপক উদ্দীপনা। এর মাঝে কাউন্সিলকে সফল করতে গঠন করা হয়েছে ৬টি উপ- কমিটি। কাউন্সিলে ১০১০ জন কাউন্সিলর ভোট দেবেন ও বিভিন্ন ইউনিট ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ১৫০০ ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন।
কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানানো হবে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার অন্তত ১শ জন অতিথিকে।
এর আগে ২০০৩ সালে শহরের চাষাড়ায় বিএনপির ক্ষমতাকালীন জিয়া হলে দলের কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অধ্যাপক রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক হন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও সিনিয়র সহ-সভাপতি হন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও তৎকালীন সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন।