সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন

জীবনযাপনের ব্যয় মিটাতে দিশেহারা নিন্ম ও মধ্যবিত্তরা নগরীর সবজির বাজারে আগুন, মাছের দামও চড়া

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০.৩৯ পিএম
  • ১২৭ বার পড়া হয়েছে

রাশেদুল ইসলাম প্রাইভেট কার চালক। বেতন পান ১৫ হাজার টাকা। সংসারে স্ত্রীসহ রয়েছে ৮ বছরের সন্তান। তিনি বলছেন তেল, ডাল, চাল, মাছ ও সবজি থেকে শুরু করে সব কিছুরই দাম বেড়েছে, কিন্তু বাড়েনি বেতন। তাই সংসার চালাতে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় জীবনযাপনের ব্যয় মিটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার মতো সীমিত আয়ের অনেক নিন্ম ও মধ্যবিত্তরা। তাদের দাবি অচিরেই বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিংসহ দ্রব্যমূল্য স্থিতি করতে হবে। সমন্বয় করতে হবে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
এদিকে নগরীর বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে আলু ও পেঁপে ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার বেশি রাখছেন বিক্রেতারা। আর চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস, তেল ও ডিম। ২শ’ টাকার নিচে মিলছে না কোনো ধরনের মাছ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজি, মাছ দাম বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির কারসাজিতে রয়েছে সব ধরনের চালসহ কিছু কিছু মুদিপণ্যের। একদিকে চালের মৌসুম শেষ অন্যদিকে চাল আমদানি হলেও বাজারে সেগুলো না আসায় দাম একটু বাড়তি বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
দেশে কয়েক মাস ধরে সব ধরনের নিত্যপণের দাম বাড়ছে। মূল্যবৃদ্ধির চাপ সামাল দিতে পারছে না শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষ। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে না পেরে অনেকেই নানা কৌশল নিচ্ছেন। কেউ আবার খাবারে মাছ-মাংস কমিয়ে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছেন। আবার দাম বেশি হওয়ায় নি¤œ আয়ের মানুষের ডিম, ডাল জোটানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে মাছ-মাংসের বাজারে ক্রেতা কমেছে বলে জানালেন বিক্রেতারা।
নগরীর দিগুবাবুর বাজারসহ সকল বাজারেই সব ধরনের সবজি দাম ভেদে ২০- ২৫ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা । বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বেগুন ৬০, কচুর লতি ৭০, মুলা ৫০, শসা ৪০, উস্তে ৮০, করলা ৬০, কাঁকরোল ৬০, ঢেঁড়স ৫০, পটল ৫০, টমেটো ১২০, সিম ২০০, কচুমুখি ৬০, পেঁপে ১৫, চিচিঙ্গা ৬০, বরবটি ৮০ আর ধনিয়া পাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে লাউ ৪০ থেকে ৬০, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৫০ টাকা ও চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস হিসেবে এবং মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর কাঁচকলা ৩০ ও লেবু ১৫ থেকে ২৫ টাকা হালি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সব ধরনের মাছের দামও বেড়েছে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, ৮ শ থেকে সাড়ে ৯ শ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি ৮০০ টাকা, রুই আকার ভেদে ১৮০ থেকে ৩২০ টাকা, কাচকি মাছ সাড়ে ৪০০ টাকা, কাতল আকার ভেদে ১৮০ থেকে সাড়ে তিনশ টাকায়, প্রতি কেজি শিং মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম আকার ভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকায়, মাগুর মাছ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়, পাঙ্গাস ১৬০ থেকে ১৯০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, টেংরা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৯০-২০০ টাকায়, সিলভার কার্প ১২০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ক্রেতা হাকিম মিয়া বলেন, মাছের দাম যেভাবে বেড়েছে এখন আর নিয়মিত মাছ খাওয়া সম্ভব হবে না। সব পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। এখন মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষগুলো কিভাবে সংসার চালাব, সেই চিন্তায় আছি। যে মাছগুলো বাজারে রয়েছে সেগুলোর দ্বিগুণ দাম। তাই মাছ না কিনেই বাসায় ফিরে যাচ্ছি।
নগরীর দিগুবাবুর বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন সিরাজুল ইসলাম। বেগুনের দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা হাঁকলেন ৮০ টাকা কেজি। তিনি দেখেশুনে দুটি গোল বেগুন দেখিয়ে ওজন করতে বললেন বিক্রেতাকে। দাম এলো ৩৫ টাকা। দুটি বেগুন কেন কিনলেন এর জবাবে রাশেদুল ইসলাম বললেন, এখন ৮০ টাকা দিয়ে এক কেজি বেগুন কেনার সামর্থ্য আমার নেই, তাই দুটি বেগুন ওজন দিয়ে ৩৫ টাকায় কিনেছি।
অন্যদিকে বাজারে শুধু সবজি নয়, বাজারে দেখা গেছে চালের দামও বেশি। মোটা-সরু সব চালের দামই বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দুই টাকা বেড়ে স্বর্ণা ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। অথচ এর আগে প্রতি কেজি গুটি স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা ও বিআর-২৮ এর দাম ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া আগের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল। এসব চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮৪ টাকায়।
আব্দুল কাদির নামের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এখন চালের সিজন শেষ। চাল আমদানি হলেও বাজারে সেগুলো আসছে না। এজন্য দাম বাড়তি।
মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মুরগির দাম বাড়তি রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। তা আজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। তবে বাজারে মুরগির দাম বাড়লেও স্থিতিশীল রয়েছে গরুর মাংসের দাম। গরুর কলিজাও বিক্রি হচ্ছে মাংসের দামেই ৬৮০ টাকা কেজি। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা কেজি। আর ব্রয়লার ১৮০, লেয়ার মুরগি (লাল) ২৮০, সোনালি বা পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজি দরে।
দিগুবাবু বাজারের পোলট্রি মুরগী ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানান, চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় হঠাৎ দাম বেড়ে গেছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪৫-১৫০টাকায় করে বিক্রি বিক্রি হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort