ক্ষমতায় থেকে জনগণের জন্য কাজ করাই তার লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ক্ষমতাকে ভোগ করার বস্তু হিসেবে নিইনি। ক্ষমতা মানে হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া, জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ পাওয়া।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার সংসদে আনা বিশেষ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার সংসদে নিজেই প্রস্তাবটি তোলেন সরকারপ্রধান। দুই দিন ধরে আলোচনা করে বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করার কথা রয়েছে।
টানা তিনবার হ্যাট্রিক বিজয় পাওয়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে গত এক যুগে বাংলাদেশের উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা আমাদের দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যদি এই করোনা মহামারি না থাকত, তাহলে কিন্তু আমরা এটা ১৭ ভাগে নামিয়ে আনতে পারতাম। যেভাবে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে দেশের কাঙ্ক্ষিত অগ্রযাত্রা কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। তারপরেও আমাদের উন্নয়নের চাকা কিন্তু থেমে যায়নি। আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা আট ভাগের উপরে এনেছিলাম। কিন্তু এই করোনার কারণে যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, বিশ্বব্যাপী যেখানে সমস্যা সেখানে আমরা এককভাবে কতটুকু করব।তারপরও আমি বলতে পারি, দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা সব থেকে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। ১১টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। কাজেই আমরা এভাবে আমাদের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা এ সময় করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে নয় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চার কোটির মতো পেয়েছে দ্বিতীয় ডোজ। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী করোনায় অর্থনীতি সচল রাখতে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে আমরা আমাদের অর্থনীতি সচল রাখছি। কৃষকদের উৎসাহিত করেছি সব ধরনের ভর্তুকি দিয়ে যাতে করে আমাদের ফসল উৎপাদনটা অব্যাহত থাকে। যেন খাদ্যের কোনো কষ্ট না হয়।’
উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। চলার পথে অনেক বাধা আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। শত বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সামনে আরও এগোতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের অঙ্গীকার হবে বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা, দমন-পীড়ন ও বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তর করে বিশ্বমঞ্চে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধশালী একটি দেশ।’
একাদশ জাতীয় সংসদের ১৫তম অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সংসদ নেতা। দিনের অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে স্মারক ভাষণ দেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন।