সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২০ অপরাহ্ন

চাষাঢ়ায় আ.লীগ অফিসে ভয়ানক বোমা হামলার ২১ বছর

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২, ৪.২৯ এএম
  • ১৩০ বার পড়া হয়েছে

২০০১ সালের ১৬ জুন রাতে শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে তৎকালীন সাংসদ শামীম ওসমানের গণসংযোগ কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি শেষ পর্যায়ে বিকট শব্দে শক্তিশালী দুটি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ২০ জন। আজ ১৬ই জুন ভয়ানক সেই ঘটনার ২১ বছর।

 

ওই হামলায় শামীম ওসমান সহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন বর্তমানে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি রতন কুমার দাস ও মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি চন্দন শীল।

সেই ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন- সেদিনের ঘটনায় নিহত হয়েছিল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পী, সহোদর সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের সাবেক জিএস আকতার হোসেন ও সঙ্গীত শিল্পী মোশাররফ হোসেন মশু, সঙ্গীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা, মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, আবু হানিফ, এনায়েতউল্লাহ স্বপন, আব্দুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাত এক মহিলা।

বোমা হামলার পর দিন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় দুইটি মামলায় (একটি বিস্ফোরক অন্যটি হত্যা) জেলা বিএনপির তৎকালীন সাধারন সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রধান করে বিএনপি ও এর অঙ্গ দলের মোট ২৭ জনকে আসামী করা হয়।

ঘটনার দীর্ঘ ২২ মাস পর ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে বোমা ট্রাজেডি মামলা দুটির ফাইনাল রিপোর্টে বলা হয়, ‘উল্লেখিত ২৭ জনের কেউই চাষাড়া আওয়ামীলীগ অফিসে ১৬ জুন ২০০১ সালের বোমা হামলায় জড়িত নয়। যদি ভবিষ্যতে অত্র মামলার তথ্য সম্বলিত ক্লু পাওয়া যায় তবে মামলাটি পুনরুজ্জিবীত করার ব্যবস্থা করতে হবে।’ দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর মামলাটি হিমাগারে থাকার পর সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারকে আদেশ দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঘটনায় নিহত চা দোকানী হালিমা বেগমের ছেলে আবুল কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান, তার ভাই নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান সহ আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও এর সহযোগি সংগঠনের ৫৮ নেতাকর্মীকে আসামী করে একটি মামলা করেন। পরবর্তিতে উচ্চ আদালত এ মামলাটি খারিজ করে দেয়।

ঘটনার দীর্ঘ ১২ বছর পর দু’টি মামলায় ২০১৩ সালের ২ মে ৬ জনকে অভিযুক্ত ও ৩১ জনকে অব্যাহতি প্রদান করে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দু’টি মামলার প্রত্যেকটির ৯৪৭ পাতার চার্জশীট দাখিল করা হয়। এতে মামলা থেকে চার্জশীট থেকে তৈমূর আলম খন্দকার সহ ৩১জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর অভিযুক্ত ৬ জন হলেন, শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, ওবায়দুল্লাহ রহমান, ভারতের দিল্লী কারাগারে আটক সহোদর আনিসুল মোরসালিন, মুহিবুল মুত্তাকিন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু।

মামলা দুটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন। হত্যা মামলায় বাদীসহ সাক্ষী ৫৬ জন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় বাদীসহ সাক্ষী ৮২ জন। ইতিমধ্যে দুই মামলায় ১৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

ঘটনায় নিহত চা দোকানি হালিমা বেগমের ছেলে আবুল কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান, তার ভাই নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫৮ নেতাকর্মীকে আসামি করে একটি মামলা করেন। উচ্চ আদালত এ মামলাটি খারিজ করে দেন।

২০০১ সালের ১৬ জুন বিকেলে স্ত্রী আর ভাই বোনদের সঙ্গে চা খেয়েছিলেন সহোদর দুই ভাই সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্রছাত্রী সংসদের জিএস আকতার হোসেন ও তার ভাই সংগীত শিল্পী মোশারফ হোসেন মসু। রাতে তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথাও বলেছিলেন তারা। তারা ফিরেছিলেন ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে।

বোমা হামলায় নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা ঘটনার দিন ব্যাংকে একটি চাকরি তদবির করতে গিয়েছিলেন শামীম ওসমানের কাছে। চাকরি হলে সংসারটি বেশ ভালোভাবে চলবে এমন প্রত্যাশাও সবার। কিন্তু সেই প্রত্যাশা আর পূরণ না হওয়ায় বর্তমানে বেশ টানাপড়েন অবস্থা চলছে সবুজের পরিবারে।

বিকেলে অসুস্থ স্বামীর পা ব্যান্ডেজ করে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ফতুল্লা থানা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পলি বেগম। কিন্তু বোমা কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ। তিন সন্তানদের মধ্যে এক ছেলে আর এক মেয়ে এলাকাতে একটি টেইলার্স দিয়ে কোনোভাবে সংসারের হাল টানছেন। বিকেলে শিশু মেয়ের জন্য কোনো ব্র্যান্ডের দুধ আনতে হবে তা স্ত্রী আনোয়ারার কাছ থেকে জেনে নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়ে যান মো. হানিফ নূরী। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিলেন না। শিশু কন্যার খাবার আনতে ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো এক কারণে আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে তিনি বর্বরোচিত বোমা হামলার শিকার হন। পরিবারের এক মাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে অসহায় পরিবারটি আজ দুই চোখে অন্ধকার দেখছে। চরম হতাশার মধ্যে তারা হাবুডুবু খাচ্ছে।

শওকত হোসেন মুক্তার একজন ভালো সাহিত্যিক ছিলেন। ১৬ জুন একটি বিশেষ কাজে বাবুরাইলের বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যান চাষাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। বোমা হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা ও সংগীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চুর তিন সন্তান নিয়ে স্ত্রী চরম অর্থকষ্টে রয়েছেন। একসময়ের সচ্ছল এই পরিবারটি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অকাল মৃত্যুতে চরম সঙ্কটে পড়েছেন। অন্যান্য পরিবারগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort