নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জেলার সবকটি উপজেলাই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন লাখো মানুষ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় অসহায় মানুষজন ঠাঁই নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও দূরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে। এই যখন অবস্থা তখন কেউ মারা গেলে গ্রামের বাড়িতে জানাজাটুকুও পড়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই জানাজার জন্য কলার ভেলায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দূরের উঁচু স্থানে।
মরদেহ খাটিয়ায় করে কলার ভেলায় তুলে দূরের শুকনা জায়গায় নিয়ে জানাজা পড়ার পর দাফন করা হচ্ছে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায়।
জানা গেছে, গত শনিবার (১৮ জুন) রাতে মারা যান মোহনগঞ্জ উপজেলার পানুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া (৩৮)। মৃত্যুর পর তার জানাজা পড়ার স্থান নিয়ে বাধে বিপত্তি। কারণ পুরো গ্রামই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। পরে গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নেন পার্শ্ববর্তী সমাজ গ্রামের উঁচু রাস্তার ওপর জানাজা পড়ানো হবে।
কিন্তু সেখানে মরদেহ নিয়ে যাওয়া ছিল আরও কঠিন একটা ব্যাপার। সমস্যা সমাধানে বানানো হয় কলাগাছের ভেলা। আর সেই ভেলায় করে মানিক মিয়ার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সমাজ গ্রামের রাস্তায়।
পরে রোববার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফন করা হয়। মৃত মানিক মিয়ার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজের অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে শনিবার রাতে মালিক মিয়ার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় মোহনগঞ্জ পৌরসভার মেয়র লতিফুর রহমান রতনের সঙ্গে কথা হলে বন্যায় সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, বন্যার পানিতে পানুর গ্রামসহ উপজেলার প্রায় সব গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় মানিক মিয়া মারা যাওয়ায় জানাজা পড়তে সমস্যা হয়। খবর পেয়ে আমি সেখানে ছুটে যাই।
পৌরসভার পক্ষ থেকে বানভাসি অসহায় মানুষকে ত্রাণ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান মেয়র রতন।