নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এড সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে ৫ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সংঘর্ষে নিহত শাওন প্রধানের বড়ভাই মিলন প্রধান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় বিএনপির অজ্ঞাত ৫০০০ নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও নিহত যুবদল কর্মী শাওনের বড় ভাইয়ের পৃথক পৃথক দুটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মামলা ও গ্রেপ্তার–আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই অধিকাংশ নেতা-কর্মী এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করতে গত বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর সকাল দশটায় শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় আলী আহম্মদ চুনকা পৌর মিলনায়তনের সামনে জড়ো থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এর আগে বিএনপি শোভাযাত্রার জন্য অনুমতি চেয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু প্রশাসন অনুমতি দেয়নি বলে জানা যায়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আলী আহম্মদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে রাস্তায় জড়ো হতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ এবং রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে। আর অনুমতি ছাড়া রাস্তায় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারবে বলে সাফ জানিয়ে দেন পুলিশ। আর বিএনপি’র নেতাকর্মীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে হবে।
এসময়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রা বের করতে চাইলে পুলিশ বাঁধা দেয় এবং লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে । এ সময় বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা অর্তকিত হামলা ও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে এবং পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
দীর্ঘ প্রায় দুই ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন যুবদল কর্মী শাওন। সংঘর্ষকালে ১৫ জন পুলিশসহ বিএনপির প্রায় শতাধিক নেতা–কর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। পুলিশ নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর থেকে ১০ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
পরেরদিন পুলিশকে হত্যার উদ্দেশে হামলা, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাদান ও ভাংচুর এবং বিস্ফোরকের অভিযোগ এনে ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো চার থেকে পাঁচ হাজার জনকে আসামী করে সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।
এই মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদেরকে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ চলাকালীন সময় আটক করা হয়েছিলো।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, বিএনপির শোভাযাত্রায় পুলিশ হামলার পর আমাকেসহ ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আমাদের ৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে উল্টো তাঁদের হয়রানি করছে। মামলার পর প্রতিদিন আমাদের পুলিশ নেতা–কর্মীদের বাড়িঘরে অভিযান চালাচ্ছে।
গ্রেপ্তারের ভয়ে দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আজ ঘরছাড়া। তিনি আরও বলেন, পুলিশের উপর ভর করে এই মিটনাইটের অবৈধ সরকার আর বেশীদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
আর এসকল মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। ইনশাল্লাহ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই সরকারের পতন ঘটানো হবে।