ইউক্রেনের খেরসনে রুশ হামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এর ফলে আটটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেখানকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে দিনিপ্রো নদীর ওপর নির্মিত নোভা কাখোভকার বাঁধে হামলা চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে মস্কো।
আজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, খেরসনের নোভা কাখোভকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নোভা কাখোভকা শহরের কাখোভকা প্ল্যান্টটির ওপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি।
৩০ মিটার চওড়া এবং ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার লম্বা নোভা কাখোভকা বাঁধ ১৯৫৬ সালে নির্মিত হয়েছিল। ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল ও ঝাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পানি সরবরাহ করে বাঁধটি। উভয় অবস্থানই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলেছে, বাঁধ ভাঙার কারণে প্ল্যান্টে তাৎক্ষণিক পারমাণবিক নিরাপত্তাঝুঁকি নেই। তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তবে বাঁধসংলগ্ন শহরগুলোতে পানির উচ্চতা ১২ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে বলে জানান শহরটির রাশিয়া নিযুক্ত মেয়র ভ্লাদিমির লেওনতিয়েভ। তাঁর আশঙ্কা, ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলের ১৪টি জনবসতিতে ২২ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, কাখোভকা বাঁধে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে রাশিয়া। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ধ্বংসের ঘটনায় সারা বিশ্ব আবারও দেখল রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনের ভূখÐ থেকে সরানো প্রয়োজন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বাঁধ ধ্বংস হওয়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আরও একটি মানবিক দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। নিজেদের ভূখÐ ফিরে পেতে ইউক্রেন যখন পালটা হামলার প্রস্তুতিতে নিচ্ছে, তখনই এই বাঁধ ধ্বংস হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ধরনের রূপান্তর এল।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঁধ ধ্বংসের সমালোচনা করেছেন বিশ্ব নেতারা। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, ইউক্রেনের বড় এ বাঁধে আক্রমণ মস্কোর দ্বারা পরিচালিত যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রুশ সেনারা সামরিক স্থাপনার পরিবর্তে বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে যুদ্ধের আইন লঙ্ঘন করছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব জেমস ক্লিভারলি বাঁধ ধ্বংসের নিন্দা জানিয়ে এটিকে একটি ‘ঘৃণ্য কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ এ হামলাকে ‘আক্রোশজনক’ বলেছেন। তিনি বলেন, এ হামলা মস্কোর আক্রমণের ধ্বংসযজ্ঞকে তুলে ধরেছে।