কুমিল্লায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জিলা স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও গণমিছিলে দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অন্তত সাত জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল ১০টায় কর্মসূচি শুরু হয়। একই সময়ে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরাও স্টেডিয়ামের সামনে অবস্থান নেন। ফলে উভয় পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এদিকে একই সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) এর গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় নগরীর পুলিশ লাইনে এলাকায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সেসময় তাদের উপর গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত হন বেশকয়েকজন নারী শিক্ষার্থী। পরে স্থায়ীরা তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের হটিয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ওই স্থানে অবস্থান নেন। বেলা ১টায় কুমিল্লা জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা পুনরায় পুলিশ লাইন এলাকায় অবস্থা নিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়কের পাশে বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, আজ সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিলের জন্য জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে জিলা স্কুলের গেটের তালা ভেঙে ছাত্রছাত্রীরা ভেতরে ঢুকে পড়ে। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় যেতে চাইলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিউমার্কেট এলাকায় জড়ো হয়ে মিছিলে বাধা দেয়। ফলে শিক্ষার্থীরা আবার জিলা স্কুলের সড়কের সামনে অবস্থান নিয়ে গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা সেই মিছিলে গুলিবর্ষণ করে ও নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
কুমিল্লা পুলিশ লাইন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনাস্থলের পাশেই পুলিশ এবং বিজিবির উপস্থিতি থাকলেও তাদের নীরব ভূমিকায় দেখা গেছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে;’ ‘লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দিবো রক্ত’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এটা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি। আমরা কুমিল্লা মহানগরীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জান্নাতুল ইভা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও অনেকে। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছি।’
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ফজলে রাব্বি বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাত জনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এছাড়া আরও আট জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৌম্য সরকার বলেন, ‘ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনায় আমরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করে ফিরিয়ে দিচ্ছিলাম। এ সময় ইউএনও সাহেব এবং আমি গাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ করে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় আমরা দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।’
এ বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সাইদুর ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কেউ মারা যায়নি। ঘটনার স্থলে পুলিশ রয়েছে, পরিবেশ এখন শান্ত।’