নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, আমরা কারো গীবত করবো না। আমরা পরোসমালোচনা করবো না। আত্মসমালোচনা করে নারায়ণগঞ্জকে গড়ে তুলবো। আমাদের কোন রাগ, দু:খ নাই। অতীত ভুলে গিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আমরা নতুন করে সম্মিলিত ভাবে পথ চলা শুরু করবো। নগরীতে এতো যানজট ছিল মাত্র টেবিলে বসে আলোচনা করেই রমজান মাসে যানজট মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা গেছে। আর দুদিন পরই ঈদ। পরবর্তীতে আবারো নগরীকে যানজট মুক্ত রেখে জনগনের সেবা করা যেতে পারে।
শুক্রবার ২৯ এপ্রিল বাদ আসর নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলা কমান্ডের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, গত দুইটা বছর রীতিমত আমাদের উপর একটা আঘাত গেছে। আমাদের মুখে কাপড় দিয়ে চলতে হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমরা আজকে একত্রিত হতে পারছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি কেউ ৭০০টাকা কেজি গরুর মাংস কিনে খায়। আবার কেউ কেউ ঘরে চাল জোগাতে হিমশিম খায়। চাল তেলের দাম উর্ধগতিতে গেছে। কিন্তু আমরা কেউ না খেয়ে নাই। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করবো উনি সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে ছিলেন বলেই আজকে দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়েছে। উনি করোনার ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে পেরেছিলেন বলেই কিন্তু আমরা পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে ভাল আছি।
এমপি সেলিম ওসমান তাঁর বক্তব্যে বীরমুক্তি যোদ্ধা মরহুম তমিজ উদ্দিন রিজভী, কমান্ডার আমিনুর রহমান, আব্দুস সাত্তার কে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দেশটাকে স্বাধীন করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমাদের সম্মানিত করেছেন। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের আয়োজিত অনুষ্ঠানে শুনতে পেয়েছিলাম আমাদের কিছু মুক্তিযোদ্ধার ঘরবাড়ি নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লাখ লাখ গৃহহীনকে ঘর দিয়েছেন। কোন মুক্তিযোদ্ধা ঘর পাবেনা এমন তো হবেনা। আমি সদর উপজেলার কমান্ডারকে অনুরোধ করবো অত্যন্ত তাদের নাম গুলো দেন। আস্তে আস্তে সবার ঘর হবে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়ে তিনি বলেন, মোহাম্মদ আলী সাহেবকে নিয়েও আজকাল প্রশ্ন তুলে উনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধেও ৫১বছর পর আজ প্রশ্ন উঠে কে মুক্তিযোদ্ধা ছিল আর কে মুক্তিযোদ্ধা ছিলনা। এটা সরকার বের করবে কে মুক্তিযোদ্ধা ছিল আর কে ছিলনা। অমুক্তিযোদ্ধা হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সমালোচনা করা, এর থেকে বড় অন্যায় আর কিছু হতে পারেনা। আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাড়িঘর জীবনের মায়া ছেড়ে আমরা যুদ্ধ করেছি। তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? আর আজকে? নব্য আওয়ামীলীগার আর নব্য মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার চিন্তা ভাবনা কইরেন না। উপর দিকে থুথু দিলে নিজের দিকে পড়বে। ইতিহাস কিন্তু বেরিয়ে যাবে। ইতিহাস কখনো চাপিয়ে রাখা যায়না। আমি কারো গীবত না করে সরাসরি বললাম। আমরা কারো গীবত করবো না, কারো সমালোচনা করবো না আমরা আত্মসমালোচনা করবো। মোট ভাত আর মোটা কাপড়ের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি। আজকে আমরা চাল আর কাপড় রপ্তানি করি। আবারো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আগামী ৫ বছরের জন্য তিনি যেন আবারো ক্ষমতায় আসতে পারেন সেই জন্য আমাদের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে।
উপস্থিত সকল মুক্তিযোদ্ধার কাছে থেকে দোয়া চেয়ে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে উন্নয়নের রাজনীতি হওয়া দরকার। এখানে মিথ্যা কথা বলে রাজনীতি করা বোধহয় আর উচিত হবেনা। কে সমাজের কাজ করছেন এটাই বড় কথা। কাজ করতে গিয়ে আমি অন্যায় করছি কিনা এটা দেখার বিষয়। এটা দেখার বিষয় না যে খতিয়ান বের করবেন। খতিয়ান বের করতে গিয়ে যদি কাউকে মুক্তিযোদ্ধা বানান আবার কাউকে রাজাকার বানান, তাহলে উপর দিকে থুথু ফেলতে গেলে কিন্তু থুথুটা নিজের উপরই পরে। সুতরাং কে কি এটা আমার দরকার নাই। নারায়ণগঞ্জের জন্য কে কাজ করছেন সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। বর্তমান জমানায় সে যদি খারাপ হয়, সে যদি আমার আপন ভাইও হয় তার সাথে আমি চলবো না। আর যে ভাল কাজ করে যে যদি আমার সৎ ভাইও হয় অবশ্যই তার সহযোগীতা আমি নিবো। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জাহাজে আনন্দ ভ্রমন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যেকোন অনুষ্ঠান করতে খালেদ হায়দার খান কাজল আমাকে সহযোগীতা করেছে। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। যদি কোনদিন ব্যক্তি কাজলের খারাপ কিছু পাই তাহলে আমি তাকে কোন অবস্থাতেই ছাড় দিবোনা। আপনারা মুক্তিযোদ্ধারা আপনাদের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানেই কাজলকে দেখেছেন। কারো গীবত করা ভালনা। আমি কাউকে উদ্দেশ্য করে বলছিনা। আসেন পরোসমালোচনা না করে আত্মসমালোচনা করি। আসেন সমস্যা যত বড়ই হোকনা কেন এক টেবিলে বসে আলোচনা করলে ওই টেবিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন রোজার আগে রাস্তায় যানজটের কি সমস্যা ছিল। আলোচনায় বসে সেটার কিন্তু একটা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। যে কেউ যদি আলোচনা করেন আমরা সহযোগীতা করবো। যার যার স্থানে সেই সেই কাজটা করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, অতীতে কি হয়েছে সেই চিন্তা করে লাভ নাই। একটা পরিবারে ৫জন থাকলে ঝগড়া হতেই পারে। আবার বিপদের সময় মিলেও যায়। এখন আমাদের বিপদ। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ হচ্ছে আমাদের এখানে প্রভাব পড়ছে। আমরা দেশে দ্রব্যমূল আরো বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। সুতরাং আপনাদের কাছে আমি জোড়হাত করে বলবো অত্যন্ত আমরা যেকজন মুক্তিযোদ্ধা আছি কারো গীবত বা উল্টাপাল্টা কথা শুনি। আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য কাজ করে যাবো।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা রিফাত ফেরদৌস, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা, সদর উপজেলার সাবেক কমান্ডার শাহজাহান ভুইয়া জুলহাস, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল সহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা দোয়ায় অংশ নিয়েছেন।