নিজেস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতার ১৮ বছরে রাজনীতিতে কোন রকম অবস্থান তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছেন সিটি মেয়র আইভী। প্রথম আওয়ামী লীগের সমর্থনে চেয়ারম্যান, পরবর্তিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মেয়র, সর্বশেষ আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হন তিনি। এতো বছর ক্ষমতায় থাকার পরও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে কর্মী বান্ধব হতে পারেননি মেয়র আইভী। বরং বিভিন্ন সময়ে নিজ দলীয় সরকারের সমালোচনা, দল বিদ্বেষী, কর্মী বিদ্বেষী ভূমিকা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ক্ষতবিক্ষত করেছে। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাধীক শীর্ষ নেতা এমনটাই জানালেন।
আর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা বলেন, ‘আইভী আপার মুখে আওয়ামী লীগ, অন্তরে বিষ’।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, মেয়র আইভী কর্মী বান্ধব নন, ঠিকাদার বান্ধব। ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ রেলওয়ের জমিতে জোরপূর্বক প্রকল্প কাজ করার সময় জাকির হোসেন নামে এক ঠিকাদারকে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ। রেলওয়ের কর্মকর্তার মামলার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হলেও আসামীকে ছাড়াতে সারারাত থানায় বসে ছিলেন মেয়র আইভী। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ঐ ঠিকাদারকে আদালতে পাঠালে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন।
ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর দেওভোগে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারকে হেয় করে বক্তব্য দেন আইভী। চারুকলা কলেজের অনুষ্ঠানে মেয়র আইভী বক্তব্য ছিলো, ‘বিএনপি, তত্ত¡াবধায়ক সরকার এবং সবশেষে নিজ দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আশাহত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী’। বিএনপির সঙ্গে নিজ দলকে তুলনা করে বলেন, আমাদের সংগ্রাম শুরু হলো। প্রায় ৪০টি চিঠি দিয়েছি। বিএনপি, তত্ত¡াবধাক ও আওয়ামী লীগ সরকার কেউ কথা রাখেনি। নিজ দল আওয়ামী লীগ আমলের কথা তুলে ধরে আইভী বলেন, ‘অনেক ঘোরাঘুরির পর আমরা জলাশয় আইন, ভূমিরক্ষা আইন দিয়ে টেন্ডার আহŸান করলাম। তবে আমার চিফ অফিসার বললেন, তিনি স্বাক্ষর করতে পারবেন না। আমি বললাম, সেটিই লিখে দেন। এরপর আমি লিখলাম, জনস্বার্থে আমি এটি করতে প্রস্তুত আছি। যদি কোনোদিন আমার বিরুদ্ধে মামলা হয় তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মানুষকে নিয়ে এটা মোকাবেলা করব এবং টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকব।
এছাড়া তত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ফর্মুলায় প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের বুকে যে ক্ষতের তৈরী করেছিলেন তা আজও ভুলে যায়নি দলীয় নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন সময়ে ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারকে ঘায়েল করতে গিয়ে প্রকাশ্যে সরকার ও সরকার প্রধাণের সমালোচনা করেছেন মেয়র আইভী।
নেতা-কর্মীরা আরও জানায়, ঠিকাদারদের জন্য মেয়র আইভীর সারারাত থানায় বসে থাকার নজীর থাকলেও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর বা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বেলায় বিদ্বেষী তিনি। এসব কারণে এতো বছরেও দলের জন্য কোন কর্মী তৈরী করতে পারেননি জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মেয়র আইভী। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রতিবাদী সাংবাদিকদের নামে হয়রানীমুলক মামলা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি কর্পোরেশনের এক কাউন্সিলর বলেন, বিগত সময়ে বিভিন্ন কারনে একাধিক কাউন্সিলর পুলিশের হাতে গ্রেফতার বা জেল হাজতে ছিলেন। দেখতে যাওয়া তো দূরের কথা তার সামান্যতম সহানুভূতিও দেখা যায়নি। সিটি কর্পোরেশনের ভিতরে কাউন্সিলর ওমর ফারুক প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে অপর কাউন্সিলর প্রয়াত কামরুজ্জামান বাবুলের উপর হামলা করেন। পিস্তলের ভয়ে প্র¯্রাব করে দেন ওই কাউন্সিলর। এ ঘটনার কোন বিচার দূরে থাক সামন্যতম সহানুভূতিও দেখাননি আইভী। এতেই বোঝা যায়, যারা আজকে আইভীর জন্য গলাবাজী করছেন, তাদের সে ব্যবহার করবে, কিন্তু বিপদে পাশে থাকবেনা কখনো। যা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক কাউন্সিলর মুন্না, কাউন্সিলর খোরশেদ, কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত এমন অনেককেই তিনি ব্যবহার করেছেন আবার ছুড়েও ফেলে দিয়েছেন স্বার্থ শেষ হওয়ার পর।