শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

কঠোর নজরদারিতেও থামেনি ইলিশ ধরা, কেনাবেচা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪, ১০.৪৩ এএম
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

প্রজনন নিরাপদ করতে ইলিশ আহরণ, কেনাবেচা ও পরিবহনের ওপর টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে শনিবার মধ্যরাত থেকে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। তারপরও পুরোপুরি থামেনি ইলিশ আহরণ ও বিপণন। রোববারও দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ আহরণ ও বিপণনের দায়ে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। বিস্তারিত তুলে ধরেছেন দৈনিক সময়ের আলোর প্রতিনিধিরা-

নোয়াখালী : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই চলছে ইলিশ বিক্রি। রোববার চৌমুহনী পৌর এলাকার গোলাবাড়িয়া মাছ বাজারে প্রকাশ্যেই মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ৪৫ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার। জব্দ করা ইলিশ মাছগুলো পরে এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা জারির পর প্রথম দিনে বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাছ বাজার পরিদর্শন করেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার। এ সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্রি করতে আনা প্রায় ৪৫ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয় এবং পরবর্তীতে তা দুটি এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। বেগমগঞ্জের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আজ প্রথম দিন। আজ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে অভিযান পরিচালনা করে জব্দকৃত ৪৫ কেজি ইলিশ এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। জনস্বার্থে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, মা ইলিশ বা জাটকা ধরে ফেললে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন কমে যাবে। ইলিশের উৎপাদন কমে গেলে যারা ইলিশ আহরণ করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বড় ইলিশ উৎপাদন হলে যারা এখন ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত তারাই সে সময় ধরবেন, তারাই বিক্রি করবেন, বেশি মূল্য তারাই পাবেন।

ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের প্রথম দিনেই সাতজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় ইলিশ বাজারজাতকরণের দায়ে সাতজন বিক্রেতাকে মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সাত হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইয়াসমিন এ দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। রোববার মা ইলিশ সংরক্ষণ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের উদ্যোগে এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অংশ নেন সদর উপজেলা ইউএনও ফারহানা ইয়াসমিন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট শফিউল আলম এবং মো. আবিরুল ইসলাম।

বরিশাল : রোববার ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে র‌্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ডের সদস্যদের নিয়ে নৌ-মহড়া দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য দফতর। বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের টাস্কফোর্স উপজেলা প্রশাসনসহ সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করবে। এ সময় আইন ভেঙে ইলিশ শিকার করলে জেল-জরিমানা করা হবে। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে যাতে নদীতে কেউ জাল না ফেলে। এ জন্য ইতিমধ্যে প্রকৃত জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বরিশাল জেলায় জেলেদের সংখ্যা বেশি থাকায় যারা এই প্রণোদনা কর্মসূচির বাইরে রয়েছেন তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিমল কুমার দাস বলেন, নিষেধাজ্ঞা সফল করতে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মাইকিং করা হয়েছে। আবার মসজিদ ও মন্দির থেকেও এ বিষয়ে প্রচার চালানোর কথা বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ৫৬ হাজার ৭০০ জেলেকে চাল দেওয়া হবে ২৫ কেজি করে মোট ১ হাজার ৪১৭ দশমিক ৫ টন। ইতিমধ্যে ১৬ হাজার ৫৭৪ জনকে ৪১৪ দশমিক ৩৫ টন চাল দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে বরিশাল জেলার বিভিন্ন নদী ও খালে ২২ দিন মৎস্য, নৌপুলিশ ও প্রশাসনের ৪৮টি দল ও ২৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার জন্য সাগর থেকে আসা ট্রলারগুলো বাজার সংলগ্ন খালের ঘাটে বেঁধে রাখা রয়েছে। আবার বাজারের শ্রমিকদেরও অনেকেই অলস সময় কাটাচ্ছেন। তারা জানান, এই বাজারের শ্রমিকদের নিষেধাজ্ঞার এই ২২ দিন অনেকটাই বেকার বসে থাকতে হবে।

ভোলা : মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযান দিয়েছে আমাদের ভালোর জন্য। কিন্তু নদীতে অভিযান জোরদার না করে আটক করে লাভ কি? কোথাও ধরবে আর আমরা বসে থাকব তা হবে না। আইন সবার জন্যই সমান হতে হবে। এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন ভোলার জেলেসহ আড়তদাররা। এ সময় আড়তদার মনির হোসেন বলেন, আমরা সরকারের দেওয়া আইন মানি। তবে সবাই ওপরে অভিযান চালায়। নদীতে ইলিশ নিধন হলে লাভ কি? এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। নদীতে আইন সবার জন্যই সমান থাকতে হবে যাতে কেউ নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরতে না পারে। সেদিকে নজর না দিলে অভিযান সফল হবে না। খুচরা ক্রেতা জয়নাল বীর বলেন, আমি মাছঘাট থেকে মাছ কিনে শহরে বিক্রি করি। আমরা ২২ দিন বিক্রি করব না, অন্যরা ঠিকই গোপনে ইলিশ ধরে বিক্রি করবে। আমরা কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছি না। লোন পরিশোধ করার জন্য উল্টো লোন নিতে হবে। পুরো এক বছর এগুলো টানতে হবে। তা হলে লাভ কি? এই সময়ে এনজিওগুলো যাতে কিস্তি নেওয়া বন্ধ রাখে সেদিকে সরকারের খেয়াল দিতে হবে। মো. শাজাহান মাঝি বলেন, আমি ১৫ লাখ টাকা লোনে জর্জরিত অবস্থায় আছি। আমরা মাছ ধরব না অথচ বরিশাল ও চাঁদপুরের জেলেরা আমাদের সামনে ইলিশ ধরে নিয়ে যাবে এটি কেমন আইন? নদীতে মাছ ধরা বন্ধ না করে কুলে (ওপর) মাছ জব্দ করে। প্রায় সময় বিভিন্ন অজুহাতে জেলেদের কাছ থেকে জাল আটকসহ নানা ভয় দেখিয়ে আদায় করে থাকে টাকা।

কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. কমান্ডার সালাউদ্দিন রশিদ তানভীর জানান, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফল করতে তারা ইতিমধ্যে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা শুরু করেছেন। এর আগে তারা জেলে ও মৎস্য ঘাট এবং আড়তগুলোতে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করেছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় কঠোরভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort