ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলের মারিব প্রদেশে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিমান হামলায় দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথির অন্তত ১৬০ সদস্য নিহত হয়েছেন। শনিবার সৌদি জোটের এক বিবৃতিতে মারিবে গত ২৪ ঘণ্টায় বিমান হামলায় হুথিদের এই প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে সৌদি জোট বলেছে, মারিবের আবদিয়া জেলায় জোটের বিমান হামলায় ইরান-সমর্থিত হুথি গোষ্ঠীর ১৬০ সদস্য নিহত হয়েছেন। হুথিদের লক্ষ্য করে আবদিয়া জেলায় ৩২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে হুথিদের ১১টি সামরিক যানও ধ্বংস হয়েছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলের মারিব প্রদেশ হুথি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সোদি জোট বলছে, হুথিদের দখলে যাওয়ার পর থেকে এই প্রদেশে বেসামরিক নাগরিকদের চলাচল এবং মানবিক ত্রাণ সহায়তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে ইয়েমেনের এই প্রদেশে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। গত সপ্তাহে মারিবে সৌদি জোটের বিমান হামলায় ৭০০ জনের বেশি হুথি সদস্যের প্রাণহানি ঘটে।
শিয়াপন্থী হুথিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ব্যাপকভাবে বিমান হামলার ওপর নির্ভরশীল। তবে প্রাণহানির পরিসংখ্যান কীভাবে তৈরি করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি সৌদি জোট। তেল সমৃদ্ধ ইয়েমেনের মারিব শহর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ ঘাঁটি।
এর আগে, শুক্রবার আবদিয়ায় সৌদি জোট বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ১৮০ হুথি সদস্যকে হত্যা এবং ১০টি সামরিক যান ধ্বংস করে। গত ফেব্রুয়ারিতে একবার মারিব দখলে অভিযান চালিয়েছিল হুথিরা, কিন্তু সেবার বিপুলসংখ্যক যোদ্ধার প্রাণহানি হওয়ায় কয়েকমাস স্থগিত ছিল তাদের সেই শহর দখল অভিযান।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের মারিবে অভ্যন্তরীণ বাস্ত্যুচুত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এসব লোকজন নতুন সংঘাতের কেন্দ্রে চলে এসেছেন।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ। জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।