এখনও ইজারা বিজ্ঞপ্তিই প্রকাশ করা হয়নি, হয়নি টেন্ডার প্রক্রিয়া বা ইজারা। তারপরেও বিগত সময়ের অস্থায়ী হাট গুলোর মাঠ দখল করে প্রায় প্রস্তুতি শেষ। অপেক্ষা শুধু গরু আসার। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাতে বসেছে, অন্যদিকে পর্যাপ্ত রাজস্ব দিয়েও হাট পাবে কি না? সেই শঙ্কায় রয়েছে প্রকৃত ইজারাদাররা।
ঈদের ১৫ দিন বাকি থাকতেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলার অন্তত ৪টি হাটের মাঠ দখল করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারের নিয়ম ও নীতি তোয়াক্কা না করে হাটের মাঠ দখলের কারণ জানতে চাইলে দখলদার বলছেন, ‘আপনারা লেখলে লেখেন। পারলে বন্ধ করে দেন।’
সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী, তার উপর এমন ক্ষমতা; প্রশ্ন হচ্ছে আসে কোথা থেকে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এদের সকলেই ক্ষমতাশীনদের ছত্রছায়ায় চলেন।
নিয়ম অনুযায়ী, অস্থায়ী পশুর হাট স্থাপনের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর সরকারি হাট বাজার ইজারা ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতি সংশ্লিষ্টনীতিমালা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে সিটি করবোরেশন বা উপজেলা প্রশাসন। নির্ধারিত দিনে সকলের সম্মূখে টেন্ডার খুলে সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাটের ইজারাদার হিসেবে ঘোষণা করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলে ঈদের পূর্ববর্তী ৩ দিনের জন্য পশু বিক্রির অনুমতি পাবে ইজারাদার।
তবে এই পুরো নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫নং ওয়ার্ডের ওমরপুরে হাজী জালাল উদ্দিন সাহেবের বালুর মাঠে অস্থায়ী পশুর হাটে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করা হলেও পুরো হাট প্রায় প্রস্তুত।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে সারি সারি বাশ। প্রবেশমুখেই একটি তোরণ তৈরির প্রস্তুতি চলছে। পুরো এই কাজের তদারকি করছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি কবির হোসেন। একই ভাবে গত বছরও তিনি এই হাট দখল করেছেন।
এছাড়াও দখল হয়ে গেছে সদর উপজেলার বক্তাবলি ফেরিঘাট সংলগ্ন মাঠ, সৈয়দপুরের কয়লাঘাট ও আল সাবাহ অস্থায়ী হাটের মাঠ।
ওমরপুরে হাজী জালাল উদ্দিন সাহেবের বালুর মাঠের হাটের দখলদার কবির হোসেন জানান, এখানে প্রতিবছরই হাট হয়। আমি মাঠের মালিকের কাছে অনুমতি নিয়েছি, গরুর মালিকদের কাছে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। সিটি করপোরেশন ইজারা দিবে, এটাও ঠিক আছে। কিন্তু আমরা এত নিয়ম মানতে পারবো না, আপনারা লেখলে লেখেন। পারলে বন্ধ করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গত ২৩ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবুল আমিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
হাটের তালিকা তৈরি করা হয়, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিফাত ফেরদৌস জানান, আমাদের এখানে হাটের জন্য মাঠের যে আবেদন এসেছে। সেগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি, জেলা প্রশাসন থেকে তদন্তের জন্য আমাদের এখানে পাঠিয়েছে। আমরা এগুলো তদন্তের জন্য এসিলেন্ডে পাঠিয়ে দিবো। এছাড়া আমাদের জনপ্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা হবে। এরপর পুরো এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে জেলা প্রশাসকের কাছে। তিনি সন্তুষ্ট হলে অনুমোদন দিবে। এরপর ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নির্ধারিত দিনে ওপেন টেন্ডার খুলে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়া হবে। আগে থেকেই কারো নেওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে আগে থেকে হাট বসানো হয়, সে ক্ষেত্রে মোবাইল কোট করে বন্ধ করে দিবো।