দেশের বিভিন্ন জায়াগায় আওয়ামী লীগ, ব্যক্তিগত প্রতিপক্ষ এমনকি সাধারণ মানুষের নামে ঢালাও মামলা দিচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি সারা দেশে এর প্রকোপ বেড়েছে। এমন ঢালাও মামলায় বিব্রত বিএনপি। দলের হাইকমান্ড এ বিষয়ে জড়িতদের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
রংপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি মামলায় ইচ্ছামতো আসামি করার অভিযোগ উঠেছে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর বিরুদ্ধে। গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মামলার বাদীর একটি ভিডিও বক্তব্য ভাইরাল হলে বিষয়টি সামনে আসে। ভিডিওতে বাদী মামুনুর রশীদকে বলতে শোনা যায়, তিনি আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহানগর বিএনপির সভাপতি সামসুজ্জামান সামু ১৮১ জনের নাম দেন।
রংপুর ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন ঘটনা ঘটছে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সীমাহীন নির্যাতনে নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ। কিছু জায়গায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এলাকায় নানা সমীকরণে নেতারা একজনের বিরুদ্ধে আরেকজন সরব হচ্ছেন। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য দল কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। সারা দেশে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা তদন্তে দল থেকে দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সময়ের আলোকে বলেন, কেউ কেউ আওয়ামী লীগের দেখানো পথে হাঁটছে। দেখাদেখি মামলা দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত হচ্ছে।
সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অতি উৎসাহীদের ঠেকাতে দল কঠোর অবস্থানে আছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গায় রাখেনি আওয়ামী লীগ। অপরাজনীতি করেছে। গায়েবি মামলা দিয়েছে। নিরপরাধ মানুষকে হেনস্থা করেছে। এখন আমাদের দলের কেউ কেউ সেই পথ অনুসরণ করছে। আমরা এগুলো নিয়ে কঠোরভাবে কাজ করছি। হাইকমান্ড সব বিষয়ে অবগত আছে।
বিএনপির ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, আমরা যদি আওয়ামী লীগের মতো একই কাজ করি তা হলে পার্থক্য থাকল কোথায়। দল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান সময়ের আলোকে বলেন, আমরা এসব বিষয় নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছি। দল থেকে সাংগঠনিক শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দলের নীতিবিবর্জিত কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে শাস্তি পেতেই হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সময়ের আলোকে বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে সরকারের পক্ষ থেকে গায়েবি মামলা দেওয়া হতো। এখনও সাধারণ লোকজন, ভুক্তভোগী লোকজন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ব্যাপারে ঢালাও মামলা হচ্ছে। ঢালাও মামলার প্রকোপ বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে। এটি আমাদের অত্যন্ত বিব্রত করে। এত কঠোর হওয়ার পরও তৃণমূল পর্যায়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এগুলোর প্রশ্রদাতাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যেকোনো মামলা নথিভুক্ত করার আগে প্রাথমিক তদন্ত করে নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি অনুরোধ করব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কাছে। দল শুধু নয়, সব মানুষের বিরুদ্ধে যে ঢালাও মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং যেকোনো মানুষের বিরুদ্ধে শত্রুতা থাকলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। একটু ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকলে তার নাম দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মামলাগুলো নেওয়ার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী যাতে যাচাই করে নেয় যে, কোনটি সম্ভব, কোনটি সম্ভব নয়। প্রাথমিক যে তদন্ত, সেটা করা দরকার।
ঢালাও মামলার উদাহরণ দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেখা যাচ্ছে, সেই খাগড়াছড়িতে কোনো ঘটনা ঘটেছে, সেটার মামলা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে গোটা দেশের (আওয়ামী লীগের) নেতাদের কেন্দ্র করে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমন কোনো মামলা দেবেন না, যে মামলায় কোনো সারবস্তু থাকবে না এবং সব মামলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের জড়িত করে মামলা দেওয়া, এটা বোধ হয় সমুচিত নয়। যেখানে যার সম্পৃক্ততা থাকবে, সেটাই দেওয়া দরকার। এমনও হচ্ছে-জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা ঠিক নয়।’