আড়াইহাজার উপজেলার ১২ যুবককে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে মিয়ানমারে জিম্মি করে তাদের মুক্তি করার জন্য পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে একটি দালাল চক্র।
দালাল চক্রটি মুক্তিপণ না পেয়ে ওই যুবকদের উপর নির্যাতন চালিয়ে তাদের মায়ানমারে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে স্বজনরা।
কারাগারে বন্দী যুবকরা হলেন, উপজেলার মানিকপুর গ্রামের মো. নাদিম, চৈতনকান্দার রতন মিয়া, একই গ্রামের আছান, উলুকান্দির মো. মনির হোসেন, বিশনন্দীর মো. সজীব, মো. কবির হোসেন, শরিফপুরের মো. জুয়েল, কড়ইতলার মো. বিল্লাল হোসেন, বিশনন্দী পশ্চিমপাড়ার মো. সজীব, চৈতনকান্দার সাফায়েত হোসেন, মো. সফিকুল এবং মো. রফিকুল ইসলাম।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ১২ পরিবারের সদস্যরা তাদের মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর নিকট লিখিত আবেদন করেছেন।
এরআগে মালয়েশিয়ার জিম্মি দশায় থাকা অবস্থায় দালালচক্রের নির্যাতনে নিহত হন আমিনুল (৩৯) নামের এক যুবক। এসব ঘটনায় আড়াইহাজার থানা পুলিশ আবুল হোসেন নামের দালাল চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই আড়াইহাজার উপজেলায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে এক আর্ন্তজাতিক মানবপাচার চক্র ও তাদের স্থানীয় এজেন্টরা। আর মানব পাচারকারী এই চক্রের ভয়ংকর ফাঁদে পা দিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন গ্রামের অনেক যুবক। অনেকে আবারও প্রাণ হারাচ্ছেন।
ওই দালাল চক্রটি ফুসলিয়ে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে আড়াইহাজার থেকে অনেক তরুণ ও যুবকদের মায়ানমারে নিয়ে বন্দী করে রাখে। মুক্তিপণ না দিলে সেই তরুণদের ভাগ্যে ঘটছে নির্মম পরিণতি।
এরইমধ্যে আড়াইহাজারের কড়ইতলা, রামচন্দ্রদী, মানিকপুর, চৈতনকান্দা, দয়াকান্দা, টেটিয়া ও শম্ভুপুরা থেকে অনেক যুবককে এভাবে পাচার করা হয়েছে।
মায়ানমারে আটক বিল্লাল হোসেনের মা সেলিনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমার ছেলেকে মায়ানমারের জেলখানায় আটকে রেখে অনেক নির্যাতন করা হচ্ছে এবং আমাকে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করছে ওই দালাল চক্র। আমি টাকা দিতে পারিনি বলে আমার ছেলেকে মুক্ত করে আনতে পারছিনা। আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা ওকাপ নামের এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিখোঁজ ও জিম্মি ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করেছি। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ওকাপ এর পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার আমরা তাই করবো।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক আহাম্মেদ জানান, ওকাপ নামে একটি এনজিওর মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। তাদের বিস্তারিত তথ্য দিতে বলেছি।
এটা পেলে আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাঁর পরামর্শ মোতাবেক এবং প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।