আশার আলো জ্বলে উঠেছিল মিটমিট করে। কিন্তু সেটা আর উজ্জ্বল আলোয় রূপ নিল না। বাজে ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। কিন্তু শেষ অবধি সেটা টেনে নিতে পারলেন না কেউ। সঙ্গে অধিনায়কত্বের ভুল তো আছেই। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে একরকম ‘জেতা’ ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরেছে ৪ উইকেটে।
দাপুটে বোলিংয়ে শুরু থেকেই পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে রেখেছিল বাংলাদেশ। পাওয়ারপ্লে-তেই তুলে নিয়েছিল পাক টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটসম্যানকে। এরপর আরও ২ উইকেট তুলে নিয়ে এবং রানরেটকে প্রায় ১০-এর কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে জয়টা নাগালেই নিয়ে এসেছিল টাইগাররা।
কিন্তু শেষদিকে এসে খেই হারিয়েছেন বোলাররা। একের পর এক শর্ট বল আর আলগা ডেলিভারিতে শাদাব আর নওয়াজকে দিলেন হাত খুলে খেলার সুযোগ। খারাপ বলের উপযুক্ত ব্যবহার করে বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারির মেলা বসান পাকিস্তানের শেষ স্বীকৃত জুটি। আর এভাবেই হাত পসকে বেরিয়ে যায় ‘খুব সম্ভব’ থাকা জয়টা।
শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৩২ রান। মুস্তাফিজ আর শরীফুলের ২ ওভারেই ৩০ রান তুলে নিলেন শাদাব আর নেওয়াজ। পাক ব্যাটসম্যানরা তুলে নিয়েছেন না বলে বলা যায় মুস্তাফিজরা দিয়ে দিয়েছেন এই রান। যেন যত বাজে বল আছে তা তারা রেখে দিয়েছিলেন শেষের জন্য, যাতে পাকিস্তান ম্যাচটা সহজে জিততে পারে! শেষ ওভারে দরকার ছিল মোটে ২ রান। গোটা ইনিংসে বলা না করা আমিনুল বিপ্লবকে তখন বোলিংয়ে আনলেন অধিনায়ক! সহজেই জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারল পাকিস্তান আর হারের বৃত্তে পড়ে থাকল বাংলাদেশ।
মাত্র ২৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ৮০ রানে গিয়ে পড়ে পাকিস্তানের ৫ম উইকেট। মাঝে কোনো উইকেট না ফেলতে পারার পেছনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ডিফেন্সিভ স্ট্রাটেজির একটা দায় সহজেই চোখে পড়ে। তিনি হিসেব করে করে এবং প্রাচীন তত্ত্ব খাটিয়ে বোলারদের ব্যবহার করেন এই ম্যাচে! অনেক সমালোচনার পরও এই স্ট্রাটেজিতেই রইলেন তিনি। লেগ স্পিনার আমিনুল বিপ্লবকে তিনি কোনো বলই দেননি! কেন? একটাই কারণ হতে পারে, ক্রিজে তখন বামহাতি ব্যাটসম্যান ফখর জামান আর খুশদিল শাহ জমে গেছেন। লেগ স্পিনারদের তারা উড়িয়ে মারবেন বেশি- এই পুরোনো হিসাব মাথা থেকে আর ফেলতে পারলেন না মাহমুদউল্লাহ। অথচ ২৪ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে তখন আরও চেপে ধরার সময়। সেটি আমিনুল বিপ্লবও তো করতে পারতেন। অন্তত তিনি পারতেন কি না পরখ করে দেখা উচিত ছিল। ম্যাচের পরিস্থিতির দাবি মেনে আক্রমণাত্মক না হয়ে আমাদের অধিনায়ক হেঁটেছেন আগে থেকে মাথায় গেঁথে রাখা ছকে!
ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনায় তাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অগোছালো অধিনায়কত্ব। এর আগেও অনেক ম্যাচে তিনি বোলারদের ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারেননি। দেখা গেছে, শেষ ওভার করার জন্য তার হাতে কোনো স্ট্রাইক বোলারই নেই!
এর আগে ১২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানি ব্যাটিং লাইনকে রীতিমতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলেন তাসকিন-মুস্তাফিজ-মেহেদি। ১১ রানে ব্যাট করা ওপেনার রিজওয়ানকে কিছুটা ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত এক ইনসুইং ডেলিভারিতে বোল্ড করেন মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর পাকিস্তানের ব্যাটিং মেশিন বাবরকে ৭ রানে বোল্ড করেন তাসকিন।
দুই ওপেনারকে হারানোর পরপরই হায়দার আলীকে শূন্য রানে ফেরান শেখ মেহেদী। এরপর অভিজ্ঞ শোয়েব মালিককে দুর্দান্ত এক থ্রোতে রান আউট করে দেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান।
বাংলাদেশ দল যেখানে পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ২৫ রান, সেখানে ৪ উইকেট হারিয়ে মোটে ২৪ রান তুলতে পারে পাকিস্তান।
৪ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে পাকিস্তান। তবে সময়ের সাথে সাথে সে চাপ কমাতে থাকেন ফখর জামান ও খুশদিল শাহ। দুজনে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। শেষ ৬ ওভারে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন পড়ে ৫২ রান। এই সময়ে ফখর জামানকে তাসকিন আর খুশদিলকে তুলে নেন শরীফুল।
পরে ৩ ওভারে ৩২ রান প্রয়োজন পড়লে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তা ২ ওভার ২ বলেই তুলে নেন ১০ বলে অপরাজিত ২১ রান করা শাদাব আর ৮ বলে ১৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলা নেওয়াজ। ৪ উইকেট ও ৪ বল হাতে রেখে ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটি ভাঙে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই। পেসার হাসান আলীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে নাঈম শেখ ফেরেন ১ রান করে। বেশ চমক জাগিয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হওয়া সাইফ হাসানও সতীর্থকে অনুসরণ করে একই পথ ধরেন সমান ১ রানেই। মোহাম্মদ ওয়াসিমের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের কিছুটা সুইং করা বলে ক্যাচ দেন স্লিপে। ১০ রানে নেই ২ উইকেট।
দীর্ঘদিন পর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা নাজমুল হোসেন শান্ত তৃতীয় দফা টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পেয়ে আজ থেমে যান মাত্র ৭ রানে, খেলেন ১৪ বল। ওয়াসিমের দ্বিতীয় শিকার হন শর্ট বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা তোলে মাত্র ২৫ রান।
আশা দেখিয়ে আরেক দফা হতাশ করলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মোহাম্মদ নেওয়াজের হালকা টার্ন করা বল বেরিয়ে যাওয়ার আগে স্টাম্প ছুঁয়ে যায় তার। মাহমুদউল্লাহ ফেরেন ১১ বলে ৬ রান করে।
সতীর্থরা যেখানে টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করে সাজঘরে ফিরে যাচ্ছিলেন, সেখানে কিছুটা আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায় আফিফ হোসেনকে। শুরু থেকে বলের মেরিট বিচার করে নিজের শক্তির জায়গা কাজে লাগান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ইনিংসের ১১তম ওভারে মোহাম্মদ নেওয়াজকে হাঁকান টানা ২ ছক্কা। যদিও ইনিংসটাকে বেশি বড় করতে পারেননি তিনি। পরে ফেরেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৬ রান করে। যেখানে ওই ২টি ছয়ের সঙ্গে ২টি চারের মার আসে তার ব্যাট থেকে।
আফিফের আউটের পর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৫ রান যোগ করেন নুরুল হাসান সোহান ও শেখ মেহেদী হাসান। হাসান আলীর দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ২২ বলে ২৮ রান করেন সোহান।
শেষদিকে শেখ মেহেদী হাসানের ২০ বলে অপরাজিত ৩০ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ দল। শেষ বলে একটি ছয় মেরে অবদান রাখেন বোলার তাসকিন আহেমদও!
পাকিস্তানের হয়ে হাসান আলী নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট।
৩ ম্যাচ সিরিজের ২য় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল শনিবার মিরপুরেই।