নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, শেখ হাসিনা মৃত্যুর ভয় করেন না। তিনি শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করেন। ষড়যন্ত্র আরেকটু হবে। আমি বলেছি ওরা নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসবে। কেউ ওদের ডেকে নিয়ে আসবে না। ওদের চরিত্র মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে গেছে। পশ্চিমাদের সুর নরম, এখন বলে শর্ত ছাড়া আলোচনায় বসো।
বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে (নম) ৪ নভেম্বর শাপরা চত্তরে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ সফল করতে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি সভায় তিনি এসবস কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, বিএনপির আন্দোলনের মানুষ হত্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ওরা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আমি এক দেড় বছর আগেই বলেছিলাম এমন হবে। ঢাকায় একটা মিটিং হল। একটা আমাদের, একটা ওদের। আমাদেরটা ওদের চেয়ে বড় ছিল। সারা বাংলাদেশের নেতাকর্মী নিয়েও ওদের মিটিং আমাদের চেয়ে ছোট ছিল। সরকারি দল হিসেবে আমাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবেই। আমরা হামলা করিনি। ওরা গিয়ে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করল। পুলিশকে পিটিয়ে মেরে ফেলল। ওদের ছাত্রদলের এক নেতা মৃত মানুষটাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে। সরকারি পুলিশকে এভাবে কুপিয়েছে। তার পকেট থেকে মোবাইল মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনেকের প্রশ্ন যে দলের কর্মী বাদে প্রস্তুতি সভায় এতো নেতা উপস্থিত হয় সেই জেলায় বিএনপি জামাত সন্ত্রাস করতে পারে কীভাবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রিজভী আহমেদ নারায়ণগঞ্জে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি কোথায় আছেন আমি জানি। উনি মাসদাইরে আছেন। শুরু থেকেই আমি জানি। শুধু দেখতে চেয়েছি ওদের সাংগঠনিক ক্ষমতা কতটুকু। আমি লজ্জিত হলাম, এদের সঙ্গে খেলবো কীভাবে। ছাত্রলীগ তো খেলবে না।
শামীম ওসমান বলেন, কী দৈন্য দশা ওদের। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আসে হরতাল করতে সঙ্গে আটজন। পাগলও যদি দাঁড়িয়ে কথা বলে সেটা শুনতে ১০ জনের বেশি লোক হবে। রিজভী সাহেব কেন্দ্রীয় নেতা ৮/৯জন লোক নিয়ে টায়ারে আগুন লাগিয়ে হরতালের উদ্বোধন ঘোষণা করলেন। অবরোধের দিনও আমরা জানি উনি কোথা দিয়ে বের হবেন। সেদিন বুঝেছিলেন তাদের অবস্থা খারাপ তাই শিবিরের ক্যাডার নিয়ে আমাদের ইয়াসিন ভাইয়ের পেট্রোল পাম্পের পাশের গলিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর প্ল্যান ছিল। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ অত্যন্ত যোগ্যতা ও ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো লক্ষ্য রাখছেন। সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাও আছে।
আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এই এমপি বলেন, অবরোধের প্রথম দিনে আড়াইহাজারে বিএনপির তান্ডবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আড়াইহাজারে পুলিশকে কোপানো হল। কিছু মানুষ তাকে ভ্যানগাড়িতে তুলে দেয়। তারপরও তাকে মারা হল। আমি প্রশাসনকে ধন্যবাদ দেই আপনারা ধৈর্য্য ধরেছেন। ওরা ক্ষমতার ৫২ লক্ষ কিলোমিটারেও নেই। এখনই মৃত পুলিশকে চাপাতি দিয়ে কোপায় আর ক্ষমতায় আসলে কী করবে। সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে নির্দয়ভাবে পেটানো হচ্ছে। আমরা ধৈর্য্য ধরেছি। আমরা দেখাতে চাই ওরা গণতান্ত্রিক শক্তি না। জামাত বিএনপি মিলে এ কাজ করেছে। ওরা ভয় দেখায় কাকে, শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনা যেদিন ভয় পাবে সেদিন দুনিয়া থাকবে না। কালকে সংবাদ সম্মেলনে জবাব পেয়েছেন তো।
শামীম ওসমান বলেন, আমরা একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায়। আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালে ওরা যা নির্যাতন করেছে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের এক এমপি ছিল পল্টিবাজ, আমাদের ১৭ জন লোককে হত্যা করেছিল। তৈমূর সাহেবের ভাই সাব্বিরকেও মেরেছিল। ওদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মতিন চৌধুরীর গাড়িতে হামলা করেছিল। আমাদের কী অবস্থা ছিল বুঝুন। আমাদের নেতাকর্মীরা দেশে থাকতে পারেনি।
আমার বাড়ি হীরা মহলের দরজা ভেঙে প্রস্রাব করা হয়েছিল। হীরা মহল ভেঙে দেয়া হয়েছিল। আমার ভাইয়ের খামারে হাঁসের গলা কেটে ছেড়ে দিয়েছিল। রাইফেল ক্লাব ভাংচুর করা হয়েছিল। সেদিন এই কায়সারের বাবা প্রথম হুংকার দিয়েছিলেন, আমরা মরিনি। এ ছিল সেসময়ের পরিস্থিতি।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির এক প্রেসিডেন্ট আছে। খবর নিয়ে একটু দেখবেন সে অন্য কোন দলে যাচ্ছে কীনা। তৃণমূলে তো যেতে পারবে না, তৈমূর আলম খন্দকার লাথি দিয়ে বের করে দেবে। বিএনপির বাচ্চা ছেলেদের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওদের যাবজ্জীবনও হতে পারে। এদের দায় দায়িত্ব কে নেবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মোহাম্মদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ রশিদ, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম ভু্ইয়া, সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, সিনিয়র সহসভাপতি ও পিরোজুপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ।